চাল নেই, বেড়া নেই, মানুষও নেই

শুধু কাঠামো দেখে বোঝা যাচ্ছে এগুলো ঘর ছিল। কিন্তু বসবাসের কিছুই নেই। পাথরঘাটার বাদুড়তলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ছবি: প্রথম আলো
শুধু কাঠামো দেখে বোঝা যাচ্ছে এগুলো ঘর ছিল। কিন্তু বসবাসের কিছুই নেই। পাথরঘাটার বাদুড়তলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ছবি: প্রথম আলো

কোনোটিতে চালা নেই। কোনোটিতে বেড়া নেই। কোনোটিতে কিছুই নেই। এটা বরগুনায় বিভিন্ন সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর চিত্র। সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ঘরগুলো। দীর্ঘদিনেও মেরামত না করায় আশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে চলে গেছে অনেক পরিবার।

আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, এসব ঘর বিতরণের পর দীর্ঘ ১৮ বছরেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। এতে করে ঘরগুলো থাকার মতো পরিবেশ হারিয়েছে। তা ছাড়া শৌচাগার ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা এবং রাস্তাঘাটও বেহাল।

বরগুনা সদর উপজেলায় ১২টি, আমতলীতে ৮, পাথরঘাটায় ৮ ও বেতাগীতে ৫টি আশ্রয়ণকেন্দ্র রয়েছে। অধিকাংশ আশ্রয়ণ প্রকল্প নদী ও খালের পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের পর থেকে এখন পর্যন্ত সংস্কার করা হয়নি আশ্রয়ণ প্রকল্প।

একাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, ঘরের চালের টিনে মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সেখানে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বৃষ্টি হলেই চালা দিয়ে পানি পড়ে। ঘরের পিলারগুলোর পলেস্তারা খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে। শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি পুকুরে গিয়ে পড়ছে। আশ্রয়ণে ঢোকার রাস্তা বেহাল।

ভাঙাচোরা বেড়া। চালে ছিদ্র। বৃষ্টি হলে ভোগান্তির শেষ থাকে না বাসিন্দাদের। পাথরঘাটার বাদুড়তলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ছবি: প্রথম আলো
ভাঙাচোরা বেড়া। চালে ছিদ্র। বৃষ্টি হলে ভোগান্তির শেষ থাকে না বাসিন্দাদের। পাথরঘাটার বাদুড়তলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ছবি: প্রথম আলো

সদরের পোটকাখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২৪০ পরিবারের জন্য একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের পানি দিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে নিরাপদ পানি অভাব দেখা দিচ্ছে এই আশ্রয়ণে। পোটকাখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রানী বলেন, তাঁদের ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির সময় চালা দিয়ে পানি পড়ে। ঘরের চারপাশের বেড়া নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি ও শীতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। জিনিসপত্র ভিজে যায়। বন্যার সময়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। ঘরের চালা পাল্টাতে কম করে হলেও তিন বান টিনের দরকার।

একই আশ্রয়ণের বাসিন্দা মো. কালাম বলেন, বৃষ্টি হলে ঘরে থাকা দায়। ঘরগুলোর টিনের চালা ছিদ্র হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি অনুদান মেলেনি। তিনি বলেন, ‘ঘরে থাকার কোনো পরিবেশ নাই। পলিথিন দিয়াও ঢাইক্যা রাহা যায় না। ঘরগুলান দিয়া সরকার আর কোনো খোঁজ লয় না।’

পোটকাখালী আশ্রয়ণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, আশ্রয়ণের ঘরগুলোতে বসবাস করার মতো কোনো অবস্থা নেই। এই আশ্রয়ণে কোনো সাইক্লোন শেল্টার নেই। বন্যার সময় তাদের দুই কিলোমিটার দূরে ঢলুয়া নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হয়। সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদ্দুজ্জামান বলেন, এই উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো থাকার অনুপযোগী। এসব ঘর সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছে।

চাল নেই। বেড়া নেই। তাই মানুষও নেই। পাথরঘাটার বাদুড়তলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ছবি: প্রথম আলো
চাল নেই। বেড়া নেই। তাই মানুষও নেই। পাথরঘাটার বাদুড়তলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ছবি: প্রথম আলো

পাথরঘাটা উপজেলায় ৮টি আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। নির্মাণের পর প্রকল্পের ঘরগুলো সরকারি অর্থায়নে সংস্কার হয়নি। পাথরঘাটার বাদুড়তলা আশ্রয়ণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রটিতে শুরু থেকে ২০ পরিবারের বসবাস থাকলেও ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় এসব ঘরের সদস্যরা অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে এই আশ্রয়ণকেন্দ্রে একটি পরিবার রয়েছে। পরিবারটির সদস্য মো. কবির হোসেন বলেন, নির্মাণের দুই বছরের মাথায় সরকারি ঘরগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে। একটু বৃষ্টি হলেই দুর্ভোগের শেষ থাকে না।

বেতাগী উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ওয়ালিউল্লাহ বলেন, আশ্রয়ণকেন্দ্রগুলোর নাজুক অবস্থা। মানুষ বসবাস করতে পারে না। সরকারি বরাদ্দ না থাকায় এসব ঘর সংস্কার করা যাচ্ছে না।

যোগাযোগ করলে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘এসব ঘর সংস্কার করার জন্য বরাদ্দ চেয়ে আমরা সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছি। বরাদ্দ পেলে ঘরগুলো সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করব। তবে এসব ঘর আবার নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।’