নারায়ণগঞ্জে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেছে

নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দুটোই কমেছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, সংক্রমণ এড়াতে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ায় সংক্রমণের হার তিন অঙ্ক থেকে দুই অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। ধীরে ধীরে সংক্রমণের ‘হটস্পট’ থেকে বেরিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জ।

দেশে করোনা–পরিস্থিতিতে রাজধানীর পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ‘হটস্পট’ হয়ে ওঠে শিল্প ও বাণিজ্য নগরী নারায়ণগঞ্জ।

গত ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ জন। মারা যাননি কেউ। গত ২০ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত হিসাবে দেখা যায়, ওই ১০ দিনে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের এবং সংক্রমিত হয়েছেন ৬৩৯ জন। এর আগে ২০ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের এবং সংক্রমিত হয়েছেন ৯৬৪ জন।

এর আগে ২০ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মৃত্যু হয় ১৬ জনের ও সংক্রমিত হন ৫২৭ জন।

এ বিষয়ে জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব ও জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। আগে যে অল্পসংখ্যক নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল, সেটি এখন কমে আসছে। এখন অধিকসংখ্যক নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, অথচ সংক্রমিত রোগী কম পাওয়া যাচ্ছে। আইসোলেশনে রোগীর সুস্থতার হারও বেড়েছে।

সবশেষ আজ শনিবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে জানা গেছে, এ পর্যন্ত কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে দুই চিকিৎসক, জ্যেষ্ঠ নার্সসহ ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমিত হয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামসহ ২০ চিকিৎসক, চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ মোট ৫ হাজার ২৯১ জন। আইসোলেশনে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৭৩৭ জন এবং নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৬ হাজার ২৫২ জনের।

৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত তিন রোগীর দুজন এই জেলায় শনাক্ত হন। ৩০ মার্চ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে এক নারীর মৃত্যু হয়। ওটা ছিল জেলায় প্রথম কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু। ৭ এপ্রিল করোনার সংক্রমণের জন্য নারায়ণগঞ্জকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলাকে অবরুদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সংক্রমণের শুরুতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে বুথ ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বুথে নমুনা দিতে গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নমুনা দিতে যেতে হতো। প্রত্যেক রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হতো এবং আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হতো। প্রয়োজনে হাসপাতালে নেওয়া হতো অথবা বাড়িতে কীভাবে আইসোলেশনে থাকবে সেই পরামর্শ দেওয়া হতো। রোগীর আইসোলেশন যাতে নিশ্চিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হতো। চিকিৎসকেরা শনাক্ত রোগীদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করতেন এবং রোগীরাও মুঠোফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন। এখনো রোগীরা নির্ধারিত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, সংক্রমণের শুরু থেকে সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ‘হটস্পট’ থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে।

এদিকে সংক্রমণের শুরু থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকা ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেশি ছিল।

সম্প্রতি সিটি ও সদর উপজেলায় সংক্রমণের হার কমলেও উপজেলা এলাকাগুলোতে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে।

এর মধ্যে রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়নে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১২ জুন শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ২১ দিনের জন্য ওই এলাকা লকডাউন ঘোষণা করে জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরু থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় রোগীদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন এবং লকডাউন নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে জেলা পুলিশ। সবার প্রচেষ্টায় মৃত্যু ও সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।’

জেলায় করোনা–পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে অবস্থিত ৫০ শয্যার সাজেদা হাসপাতালকে চারটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) ৩৫ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরবর্তী সময়ে ৮ এপ্রিল শহরের খানপুরে অবস্থিত সরকারি ৩০০ শয্যা নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালকে ১০টি আইসিইউ বেড ও ১০০ শয্যার করোনাভাইরাস হাসপাতালে রূপান্তর করে স্বাস্থ্য বিভাগ।