খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট বানভাসি মানুষের

পানিতে ডুবে আছে বসতবাড়ি। থাকার জায়গা নেই। তার ওপর তীব্র খাদ্যসংকট। গবাদিপশুর খাবার নিয়েও মহা দুশ্চিন্তা। বিপদে বানভাসি মানুষ। ছবি: প্রথম আলো
পানিতে ডুবে আছে বসতবাড়ি। থাকার জায়গা নেই। তার ওপর তীব্র খাদ্যসংকট। গবাদিপশুর খাবার নিয়েও মহা দুশ্চিন্তা। বিপদে বানভাসি মানুষ। ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামে নদ–নদীর পানি ধীরে কমলেও এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। ১১ দিন ধরে বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে তীব্র হচ্ছে গোখাদ্যের সংকট।

এর মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বাঁধে ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে আছে।

এই অবস্থায় বন্যা ও করোনা পরিস্থিতি জানতে কাল রোববার কুড়িগ্রামে আসছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তিনি বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকেন্দ্রে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হবেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বাঁধের বেশির ভাগ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে ধরলা নদী–তীরবর্তী ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়বে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, আজ শনিবার বেলা তিনটায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

টানা ১১ দিন জেলার নদ–নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের দেড় লক্ষাধিক মানুষের। কোনো কোনো পরিবারের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও বেশির ভাগ পরিবারের ঘরবাড়ি থেকে এখনো বন্যার পানি নামেনি। এই অবস্থায় ঘরে খাবার না থাকায় খাদ্যসংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গবাদিপশুরও খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে গবাদিপশুদের গাছের পাতা ও কাশিয়া খেতে দিচ্ছেন বানভাসি মানুষ।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন জানান, তাঁর ইউনিয়নের তিন হাজার পরিবার বন্যাকবলিত। এখনো তাদের ঘরবাড়ি থেকে পানি নামেনি। করোনা আর বন্যায় পরিবারগুলো খাদ্যসংকটে পড়েছে। তিনি সরকারিভাবে মাত্র ৩০০ প্যাকেট খাদ্যসহায়তা পেয়েছেন, যা মাত্র ৩০০ পরিবারকে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বন্যাদুর্গত এলাকায় শিশু ও গবাদিপশুর খাদ্য বিতরণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আজ দুপুরে সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশন রংপুরের পক্ষ থেকে কুড়িগ্রাম সদর ও চিলমারী উপজেলায় ৩০০ মানুষকে খাদ্যসহায়তা হিসেবে চাল, ডাল, লবণ তেল, আলুসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। এ সময় ক্যাপ্টেন মিজান উর রশীদ ভূঁইয়া, লেফটেন্যান্ট ইজাজ আহমেদ সার্জন, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার শেখ মাহবুবুল মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, আরও দু–তিন দিন পানি কমা অব্যাহত থাকবে এবং আগামী দুদিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তার পানি আবারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়হান আলী বলেন, এ পর্যন্ত বন্যার্তদের মধ্যে ২৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ কিট, ১২টি টিউবওয়েল, ১২টি ল্যাট্রিন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৪৩৫টি টিউবওয়েল মেরামত করে দেওয়া হয়েছে। ৬ শতাধিক টিউবওয়েলের গোড়া উঁচু করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বন্যার্তদের মধ্যে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও দুটি বিশুদ্ধ পানির প্ল্যান্টের ভ্রাম্যমাণ গাড়ি ঘুরে ঘুরে পানি সরবরাহ করছে। প্রতিটি বিশুদ্ধ পানির প্ল্যান্ট থেকে প্রতি ঘণ্টায় দুই হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান জানান, বন্যার্ত মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এর বাইরেও কোনো খারাপ খবর পেলে তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকার শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে ২০০ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এগুলোও বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে বন্যাকবলিত এলাকার শিশু ও গবাদিপশুর খাবারের বরাদ্দ পাওয়া যাবে। পাওয়ামাত্রই তা বিতরণ করা হবে।