কুড়িলে গোলাগুলিতে নিহত ২: ডিবি

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় গতকাল রোববার রাতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সঙ্গে গোলাগুলিতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ তথ্য জানিয়ে ডিবি বলছে, তাঁরা ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি। গত ১৭ জুন গুলশানে হারুন নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁরা।

নিহত দুজনের নাম নান্নু ও মোশাররফ।

ডিবি সূত্র জানায়, তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা সূত্রে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, অটোরিকশায় করে একটি দল অপরাধ সংঘটনে খিলক্ষেত এলাকায় রয়েছে। ডিসি গুলশানের নেতৃত্বে একাধিক টিম রাত ১১টা থেকে ৩০০ ফুট পূর্বাচলগামী রাস্তাসহ খিলক্ষেতের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্যাওড়া বাসস্ট্যান্ড দিয়ে খিলক্ষেত ফ্লাইওভারের দিকে যেতে থাকে। ডিবির সিগন্যালে না থেমে গাড়িটি চলে যায়। ফ্লাইওভারের পূর্ব প্রান্তে অবস্থানরত ডিবির অন্য দল চেকপোস্ট বসায়। শ্যাওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ডিবির দলটি অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাওয়া করতে থাকে। কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভারের নিচে অটোরিকশা থেকে দুজন দুর্বৃত্ত ডিবির দিকে গুলি ছোড়ে। ডিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির একপর্যায়ে দুই ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ডিবি ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়।

ডিবি অটোরিকশা থামিয়ে শফিকুল ইসলাম ও সিদ্দিক নামের দুজনকে আটক করে। ঘটনাস্থল থেকে বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, দুটি গুলি, কাদামাখা একটি চাপাতি, একটি চাকু, এক কৌটা মলম, একটি প্যাঁচানো গামছা, দুটি মোবাইল ও একটি অটোরিকশা জব্দ করে ডিবি।

ডিবি উত্তরের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আটক শফিক এবং তাঁর সহযোগী সিদ্দিক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানান, গোলাগুলিতে নিহত ব্যক্তিদের একজনের নাম নান্নু। অন্যজনের জনের নাম মোশাররফ। নান্নু একসময় হলুদ ট্যাক্সিক্যাব চালাতেন। ট্যাক্সিক্যাবের যাত্রী হত্যায় জড়িত থাকায় তিনি ছয় বছর কারাগারে ছিলেন। মোশাররফও একাধিক মামলায় সাজা ভোগ ও হাজতবাস করেছেন। শফিক ও সহযোগী সিদ্দিক ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হয়ে সাজা ভোগ ও হাজতবাস করেছেন।

ডিবির তথ্যমতে, শফিক ও সিদ্দিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নান্নু ও মোশাররফের সঙ্গে তাঁরা মাদকসেবন করতেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশার মালিকের কাছ থেকে নিয়মিত যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর মহাখালী, বনানী, চেয়ারম্যানবাড়ি, আমতলী, সৈনিক ক্লাব থেকে যাত্রী উঠিয়ে চোখে মরিচের গুঁড়া মেশানো মলম মাখিয়ে অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতেন। যাত্রী বাধা দিলে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে লাশ পূর্বাচলগামী ৩০০ ফুট রাস্তা, তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ি ও বেড়িবাঁধ এলাকায় ফেলে দিতেন।

ডিবি দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ জুন তাঁদের নির্মমতার শিকার হন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হারুন। তাঁকে আমতলী থেকে যাত্রী হিসেবে উঠিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল পার হওয়ার পরপরই কিলঘুসি মেরে চোখে মলম লাগিয়ে দেয় এই চক্র। হারুন বাধা দিতে চাইলে তাঁর গলায় গামছা পেঁচিয়ে নান্নু ও মোশাররফ জোরে টানতে থাকেন। একপর্যায়ে হারুনের নাক–কান দিয়ে রক্ত বের হয়ে তিনি মারা গেলে আসামিরা কুড়িল ফ্লাইওভার হয়ে অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কাছাকাছি ধাক্কা দিয়ে হারুনের লাশ ফেলে পালিয়ে যান।