'হামার ফসল বেচার জায়গা তো হাটোত নাই'

তারাগঞ্জ হাটে জায়গার অভাবে এভাবে রাস্তার ওপর ধান, সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য বসেন কৃষকেরা। ছবিটি আজ সোমবার তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়ক থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
তারাগঞ্জ হাটে জায়গার অভাবে এভাবে রাস্তার ওপর ধান, সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য বসেন কৃষকেরা। ছবিটি আজ সোমবার তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়ক থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়কটি দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার। ওই সড়ক দিয়ে দুই উপজেলার হাজারো মানুষ যানবাহনে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। কিন্তু সড়কটির তারাগঞ্জের এক কিলোমিটার অংশে রাস্তার ওপর হাট বসায় যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কৃষকদের অভিযোগ, হাটে তাঁদের জন্য বরাদ্দ জায়গা পাইকারি ব্যবসায়ীরা দখল করে ফেলেছেন। এজন্য বাধ্য হয়ে তাঁরা নিজেদের ফসল বিক্রির জন্য সড়কে রাখেন।

তারাগঞ্জ বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহব্বত আলী বলেন, কৃষকের জায়গা দখল করে পাইকারেরা পাকা ঘর তুলেছেন। এ খবর বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে। কিন্তু কেউ সমস্যা সমাধান করতে এগিয়ে আসেনি। উপায় না পেয়ে কৃষকেরা রাস্তায় ফসল বিক্রি করছেন। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারীরা।

কথা হয় বুড়িরহাট গ্রামের কৃষক আজহারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাবা, রাস্তাত দাঁড়ে ধান না বেচে করমো কি? হামার ফসল বেচার জায়গা তো হাটোত নাই। দখল করি পাকা দোকান ঘর তোলছে। ওই জন্যে হামাক রাস্তাত ফসল বেচার নাগোছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১৮টি হাট–বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট হচ্ছে তারাগঞ্জ। প্রতি সোমবার ও শুক্রবার হাটটি বসে। প্রতিদিন বসে বাজার। এবার ২ কোটি ২৫ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাটে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বিক্রির নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় তাঁরা হাটের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া তারাগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ সড়কের ওপর তাঁদের উৎপাদিত ফসল বিক্রয়ের জন্য বসেন। এতে ওই দুই দিন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

আজ সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটের ভেতরে জায়গা না হওয়ায় সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশে ধান, সবজির বাজার বসেছে। ফলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে সড়কটি। ক্রেতাদের ভিড়ে ওই এক কিলোমিটার রাস্তাও যেন হাটে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে ঠেলাঠেলি করে অতি কষ্টে চলাচল করছেন নিরুপায় পথচারীরা।

হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা ভীমপুর গ্রামের ছকমাল হোসেন বলেন, ‘ভাইজান, সোবায় কয়, কৃষক বেলে দেশের প্রাণ। সেই প্রাণ রাস্তাত দাঁড়ে কষ্ট করি কম দামে ফসল বেচাওছে। প্রশাসনের লোক, জনপ্রতিনিধিরা রাস্তা দিয়া যাওয়ার সময় দুঃখ–কষ্ট দেখি যাওছে। তা–ও হামাক ফসল বেচার জায়গা ব্যবস্থা করি দেওছে না। হাটোত জায়গা না থাকায় হামরা মেলাদিন থাকি সবজির বাজার রাস্তার দুই পাশে বসাই। জাগা পাইলে রাস্তাত দোকান দেনো না হয়।’

জানতে চাইলে মুঠোফোনে হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান শাহ্ বলেন, ‘ প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকায় হাটটি নিয়ে বিপাকে পড়েছি। জায়গার অভাবে কৃষকেরা রাস্তায় ফসল বেচায় ঠিকমতো খাজনা পাচ্ছি না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, এই সমস্যাগুলো তো দীর্ঘদিনের। পরিকল্পনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।