করোনাকালে শিশুদের পাশে চিকিৎসক অসীম সাহা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেও অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন শিশুবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা। ছবি: প্রথম আলো
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেও অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন শিশুবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অন্য অসুস্থতায় ভোগা রোগীরা দুঃসহ অবস্থার মুখে পড়েছে। করোনায় আক্রান্ত কি না, সেই সনদ নিয়ে তাঁদের চিকিৎসাসেবা পেতে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে বেড়াতে হয়। শিশুরাও এই ভুক্তভোগীর তালিকায়। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ঠান্ডা–জ্বরসহ সন্তানের সাধারণ রোগের চিকিৎসা নিতে মা–বাবাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সন্তানের কী হবে ভেবে দুশ্চিন্তায় তাঁদের দিন কাটে।

ভূমিষ্ঠ শিশুসহ পাঁচ বছরের নিচের বয়সের শিশুদের অসুস্থতায় মা–বাবা চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার বা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছুটোছুটি করেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। বেশির ভাগ চিকিৎসক করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে চেম্বারে বসেন না।

সেখানে ব্যতিক্রম ঝালকাঠির শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা। তিনি করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই ঝালকাঠি শহরের টিনপট্টি সড়কের ব্যক্তিগত চেম্বারে সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অসীম কুমার বরিশাল শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু বিভাগের প্রধান থেকে এখন অবসরজনিত ছুটিতে আছেন। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে শুরু থেকেই কোনো শিশুবিশেষজ্ঞ নেই। এ অঞ্চলের শিশুদের চিকিৎসায় আস্থার সঙ্গে উচ্চারিত হয় তাঁর নাম।

ঝালকাঠির প্রত্যন্ত এলাকা কাঁঠালিয়া, বরগুনা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পিরোজপুরের কাউখালী ও ভান্ডারিয়া থেকে অভিভাবকেরা তাঁদের শিশুসন্তানদের নিয়ে সাতসকালেই ছুটে আসেন অসীম কুমারের চেম্বারে। সকাল থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে তাঁর চেম্বারে। প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০টি শিশুর চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি। ঝালকাঠি জেলার বাইরের লোকজন তাঁদের সন্তানদের নিয়ে এখানে ছুটে আসছেন অনেক আশা–ভরসা নিয়ে। শিশুর নিউমেনিয়াসহ জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে অসীম কুমার শিশুদের সুস্থ করে তুলছেন। দরিদ্র শিশুদের বিনা মূল্যে সেবা দিচ্ছেন তিনি।

সীম কুমার ঝালকাঠি লোকনাথ সেবা সংঘের উপদেষ্টা। সদরের পোনাবালিয়া শিববাড়ি মন্দিরের সভাপতি ও জেলা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি। এ সংগঠনগুলোর ব্যানারে তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে করোনাকালে কর্মহীন প্রায় এক হাজার মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও মাস্ক বিতরণ করেছেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগেও পোনাবালিয়া শিববাড়ি মন্দিরের উদ্যোগে প্রতি মাসে শিশুদের মধ্যে ফ্রি চিকিৎসা দিতেন। অতিদরিদ্র রোগীদের কাছ থেকে ভিজিট না নিয়েই তাঁদের সন্তানদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

সরেজমিনে গত শনিবার সকালে শহরের টিনপট্টি সড়কে অসীম কুমারের মালিকানাধীন কমলা ফার্মেসির চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অসুস্থ শিশু ও তাদের অভিভাবকেরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসে আছেন। অসীম কুমার দূরের শিশু ও বেশি অসুস্থ শিশুদের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। পরীক্ষার জন্য শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের দূরে যেতে হয় না। সেখানেই স্বল্প খরচে সব পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। আবার শ্বাসকষ্টের শিশুদের অক্সিজেন দেওয়ারও সুবিধা আছে।

বরগুনার বামনা থেকে সন্তানের চিকিৎসা নিতে আসা মরিয়ম বেগম বলেন, হাসপাতালসহ বাইরে কোথাও এখন শিশুদের চিকিৎসা পাওয়া যায় না। সেখানে অসীম কুমার করোনাভাইরাসকে ভয় না করেই শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনিই দক্ষিণাঞ্চলের শিশুদের চিকিৎসাসেবায় একমাত্র ভরসা।

এ বিষয়ে অসীম কুমার সাহা বলেন, ‘করোনাভাইরাসকে ভয় করে আমি যদি বাসায় বসে থাকি, তবে শিশুরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। তাই সংক্রমণের শুরু থেকেই আমি শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।’