সাইকেল কেনার জমানো টাকা ত্রাণ তহবিলে দিল ছেলেটি

প্লাস্টিকের ব্যাংকে জমানো সাইকেল কেনার টাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমানের হাতে তুলে দেন এই খুদে শিক্ষার্থী। জেলা প্রশাসন কার্যালয়, জামালপুর, ৯ জুলাই। ছবি: সংগৃহীত
প্লাস্টিকের ব্যাংকে জমানো সাইকেল কেনার টাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমানের হাতে তুলে দেন এই খুদে শিক্ষার্থী। জেলা প্রশাসন কার্যালয়, জামালপুর, ৯ জুলাই। ছবি: সংগৃহীত

ছেলেটির বয়স মাত্র ছয় বছর। প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সাইকেল চালানোর খুব শখ তার। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে সাইকেল আর কেনা হচ্ছিল না। তাই শখ পূরণে খাবারের টাকা বাঁচিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাংকে টাকা জমাচ্ছিল সে। দেড় বছর থেকে সে ওই ব্যাংকে টাকা সঞ্চয় করে আসছিল। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে তাঁর স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। ছেলেটি তার বাবার কাছ থেকে জেনেছে করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে অসহায় জীবন যাপন করছে। জমানো টাকায় তাঁদের খাদ্যসহায়তা দেওয়ার ইচ্ছার কথা সে বাবাকে জানায়। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার বাবাকে নিয়ে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্লাস্টিকের ব্যাংকটি জমা দিয়ে আসে ছেলেটি।

ওই ছেলের নাম আহমদ শেখ। সে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের মো. জিমি ইসলামের ছেলে। আহমদ শেখ ইসলামপুর উপজেলার ডিগ্রীরচর খলিফাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। তার বাবা একজন আনসার সদস্য। তিনি নারায়ণগঞ্জে চাকরি করেন।

জিমি ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, 'বিভিন্ন সময় দোকানে কিছু খাওয়ার জন্য ছেলেকে ৫ থেকে ১০ টাকা করে দিতাম। কিন্তু তা খরচ না করে সাইকেল কেনার জন্য ব্যাংকে জমাতে থাকে। করোনা নিয়ে বিভিন্ন সময় ছেলের সঙ্গে কথা বলতাম। করোনার কারণে মানুষ এখন কর্মহীন। অনেকেই খেয়ে না–খেয়ে আছেন। মানুষের এখন খুব বিপদ। এসব বলাতে ছেলের মনটা অনেক নরম হয়। কিছুদিন থেকে বারবার বলছে, তার জমানো টাকাগুলো গরিব মানুষকে দেওয়ার জন্য। পরে ওই টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিতে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে গিয়ে দিয়ে আসা হয়।'

শিশু আহমদ শেখ বলে, 'সাইকেল কেনার জন্যে টাকাগুলো জমিয়েছিলাম। করোনার কারণে মানুষ কষ্টের মধ্যে আছে বলে বাবার কাছ থেকে শুনেছি। তাই টাকাগুলো জমা দিয়েছি। যাতে মানুষের উপকার হয়।'

জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোকলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এত ছোট একজন মানুষ। তবে মানসিকতার দিক থেকে সে অনেক বড়। তাই মানুষের দুঃখ–কষ্টটা বুঝতে পারে। করোনার মধ্যে অনেক মানুষ কষ্টে আছে। তাদের সাহায্য করতে নিজের জমানো টাকাগুলো করোনার ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছে। খুদে এই শিক্ষার্থীর মানবিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়।