সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই করোনাকালে উপনির্বাচন: সিইসি

যশোর-৬ আসনে উপনির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কমিটির সভায় বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। ছবি: প্রথম আলো
যশোর-৬ আসনে উপনির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কমিটির সভায় বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। ছবি: প্রথম আলো

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই করেনাকালে উপনির্বাচন করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি আজ শনিবার যশোরের কেশবপুরের উপনির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কমিটির সভায় ও প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।

সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে দুর্যোগ-দুর্বিপাক হলে ৯০ দিন ভোট পিছিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে। ১৫ জুলাই সেই সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেই নির্বাচন করা ছাড়া তাদের কোনো পথ নেই। উচ্চ আদালতের মতামত এ সম্পর্কে চাওয়া যেত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচ্চ আদালতে যাওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।

করোনাভাইরাস রোধে কেশবপুর পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডে লাল এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে ভোট কীভাবে হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন বলে তিনি আশা করেন। কোনো দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হচ্ছে কি না, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোনো দলকেই সুবিধা দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রে নির্বাচন হয়েছে, ফলে আমাদের দেশেও নির্বাচন হওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। বিপুল পরিমাণ ভোটার নির্বাচনে উপস্থিত হবে বলে আমি আশা করি।’

কেশবপুর আবু শারাফ সাদেক মিলনায়তনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন। এ ছাড়া ছিলেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মু. আনোয়ার হোসেন, খুলনার ডিআইজি খন্দকার মহিদ উদ্দীন, যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও যশোরের জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির প্রমুখ।

আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন চাকলাদার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান। সভায় হাবিবুর রহমান বলেন, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে নির্ভয়ে আসতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। শাহীন চাকলাদার বলেন, তাঁদের দলের কর্মী, সমর্থকসহ ভোটারদের নির্বাচনে আসতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক ভোটার উপস্থিত হবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা বলেন, ভোটাররা নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন এবং বাড়ি ফিরে যাবেন। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে কেশবপুর পাইলট স্কুল মাঠে নামেন। সভা শেষে তিনি হেলিকপ্টারযোগে বগুড়া-১ উপনির্বাচনী এলাকায় চলে যান।

গত ২৯ মার্চ যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করেনা বিস্তার লাভ করায় নির্বাচন কমিশন ২১ মার্চ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে। ৪ জুলাই নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৪ জুলাই।

উপনির্বাচনে তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, বিএনপির প্রার্থী কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল হোসেন আজাদ ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান। বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় এখন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

কেশবপুরের সাংসদ ও সাবেক জন প্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক গত ২১ জানুয়ারি ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হলে নির্বাচন কমিশন ১৬ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করে।