পশুর হাটের বিকল্প ভাবতে হবে

মুশতাক হোসেন
মুশতাক হোসেন

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিন্তু কমছে না। বরং আজ (গতকাল শনিবার) দেখা গেল যতজন পরীক্ষা করেছেন, তার মধ্যে ২৪ শতাংশের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণ এখন শহরাঞ্চল ছাড়িয়ে শহরের কাছাকাছি এলাকার গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে এবার কোরবানির পশুর হাট একেবারে করতে না দিলেই ভালো হতো। কারণ এটা করা হলে যতই স্বাস্থ্যবিধি নেওয়া হোক না কেন ঝুঁকি বাড়বে। বিকল্প কী হতে পারে, সে বিষয়ে ধর্মীয় নেতা ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনেরও করণীয় আছে।

কোরবানির হাট করতে হলেও বিধিবিধান কী হবে, সে বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটি যেসব পরামর্শ দিয়েছে, সেগুলো মেনে চলতে হবে। যেমন অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাট করতে না দেওয়া ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করা, শহরের ভেতরে হাট স্থাপন করতে না দেওয়া, পশুর হাট খোলা ময়দানে করা ইত্যাদি।

আর আসন্ন ঈদের ছুটিতে যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ফেরিতে ভিড় বেশি হয়। এর ফলে সংক্রমণের আশঙ্কাও বেশি থাকে। তাই সে বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। ফেরির ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

বৃষ্টি ও বন্যার কারণে হয়তো মানুষ করোনা শনাক্তের পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে কম আসতে পারেন। বন্যা ও বৃষ্টির কারণে হয়তো সামাজিক দূরত্বও কিছুটা বাড়বে। কিন্তু বন্যাকবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে। ফলে সেখানে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে। সামনে ঈদ আছে। কোরবানির বাজার ও যাতায়াতের বিষয় আছে।

এই অবস্থায় দুই ধরনের করণীয় আছে। প্রথমত, মানুষকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। খুব জরুরি না হলে ভিড়ের মধ্যে একেবারেই যাওয়া যাবে না। যাওয়ার জন্য অপরিহার্য হলে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ সেরে আসতে হবে। এগুলো মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে করতে হবে।

আর দ্বিতীয়ত, কর্তৃপক্ষ বা স্বাস্থ্য বিভাগকে যেটা করতে হবে সেটা হলো, যাঁদের জ্বর-কাশি ইত্যাদি উপসর্গ থাকবে, তাঁদের পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। সবাইকে হয়তো পরীক্ষার আওতায় আনা সম্ভব না–ও হতে পারে। তবে পরীক্ষা করেই হোক বা লক্ষণ দেখেই হোক দ্রুত চিহ্নিত করে আইসোলেশনের (আলাদা) ব্যবস্থা করে চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে। যাঁরা জটিল রোগী নন, তাঁদের বাসায় রাখতে হবে। আর বাসায় রাখা সম্ভব না হলে আইসোলেশন কেন্দ্রের ব্যবস্থা করতে হবে। না হয় রোগটি ছড়াবে। আর যাঁদের করোনা পজিটিভ পাওয়া যাবে, তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনের (সঙ্গনিরোধ) ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাঁদেরও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। আর লক্ষণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

লেখক: আইইডিসিআরের উপদেষ্টা