গঙ্গাচড়ায় তিস্তায় পানির তোড়ে সড়ক ভেঙে ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী

রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছেই। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে বানভাসি মানুষ। আজ সকালে গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকায়। ছবি: মঈনুল ইসলাম
রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছেই। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে বানভাসি মানুষ। আজ সকালে গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকায়। ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে একটি সড়ক ভেঙে দুই ইউনিয়নের সাত গ্রামের আড়াই হাজার পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কোলকোন্দ ও লক্ষ্মীটারি—এই দুই ইউনিয়নের পানিবন্দী মানুষজন চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।

গ্রামগুলো হলো কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, মটুকপুর ও চিলাখাল এবং লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের বাগেরহাট, শংকরদহ, ইছলি ও জয়রাম ওঝা গ্রাম। এই সাত গ্রামে প্রায় আড়াই হাজার পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বাস রয়েছে বলে ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানিয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, গত বছর প্রায় আট লাখ টাকা ব্যয়ে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরে মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয়। গত শুক্রবার রাতে তিস্তা নদীর পানির স্রোতে সড়কটির প্রায় এক হাজার ফুট অংশ ধসে গেছে। এতে নদীর পানি চরের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ে কোলকোন্দ ইউনিয়নের তিন গ্রাম ও এর পাশের লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চার গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রতিটি বাড়িতে এক হাঁটু পানি, আবার কোথাও এক কোমর। পানি ডিঙিয়ে বন্যাকবলিত মানুষ চলাফেরা করছেন। গরুসহ অন্যান্য পশুকেও শুকনা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ ঘরের চৌকির ওপর জিনিসপত্র তুলে রেখেছেন। সেখানেই রান্নার কাজও সারছেন তাঁরা।

কোলকোন্দ ইউনিয়নের মালেক মিয়াকে দেখা যায়, তাঁর বৃদ্ধ মাকে নৌকায় করে অন্য কোথাও উঁচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে রয়েছে ছাগল ও বিছানাপত্র। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাইতোত হঠাৎ করি নদীর পানি বাড়া শুরু করিল। হামারগুলার কষ্টের কথা কায়ও শোনে না।’

একই এলাকার আরজিনা বেগমকে দেখা গেল, একটি ভ্যানের ওপর ছাগল লালনপালন করছেন। তিনি বলেন, ‘নদীর পানিত থাকতে থাকতে হামারগুলার সয়া গেইছে।’ এমনই করে আরও অনেক পানিবন্দী মানুষ তাঁদের দুর্ভোগের কথা জানালেন।

কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহরাব আলী জানান, নদীর পানির স্রোতে বিনবিনা এলাকায় চরের একটি সড়কের প্রায় এক হাজার ফুট ধসে গেছে। ফলে নদীর পানিতে শুক্রবার রাতেই প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে।

লক্ষ্মীটারি ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী জানান, দ্বিতীয়বারের মতো এ বন্যায় ইউনিয়নের দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের কেউ কেউ শুকনা স্থান বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে জানান, তিস্তা নদীর ভাঙন ঠেকাতে করণীয় নিয়ে ইতিমধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।