পঞ্চগড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, সাঁকো বিলীন

ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে বেড়েছে পঞ্চগড়ের নদ-নদীর পানি। সোমবার দুপরে জেলার প্রধান নদী করতোয়ার থই থই পানিতে ঝুঁকি নিয়ে একটি নৌকায় সদর উপজেলার ডিয়াবাড়ি এলাকা থেকে পঞ্চগড় শহরের দিকে আসেন অর্ধশতাধিক মানুষ। ছবি: প্রথম আলো
ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে বেড়েছে পঞ্চগড়ের নদ-নদীর পানি। সোমবার দুপরে জেলার প্রধান নদী করতোয়ার থই থই পানিতে ঝুঁকি নিয়ে একটি নৌকায় সদর উপজেলার ডিয়াবাড়ি এলাকা থেকে পঞ্চগড় শহরের দিকে আসেন অর্ধশতাধিক মানুষ। ছবি: প্রথম আলো

টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়তে শুরু করেছে পঞ্চগড়ের নদ-নদীর পানি। প্রবল স্রোতে রোববার রাতে ভেসে গেছে সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের মীরগড় এলাকার করতোয়া নদীর কাঠের সাঁকোটি। প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ সাঁকোটির বেশির ভাগই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ধাক্কামারা ও গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের সাতমেরা ও দেবনগর গ্রামের বাসিন্দারা। এখন তাঁদের নৌকা দিয়ে বা বিকল্প পথে পঞ্চগড় শহর যেতে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে।

এদিকে নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। পঞ্চগড় পৌরসভার নিচু এলাকাগুলোর চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পৌরসভার ধাক্কামারা-নিমনগর এলাকার শতাধিক পরিবার এবং রামেরডাঙ্গা এলাকার তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব পানিবন্দী পরিবারের লোকজন কেউ কেউ তাঁদের পাশের স্বজনদের বাড়িতে, আবার কেউ কেউ নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দীদের মধ্যে তিন শতাধিক পরিবার সোমবার সকালে পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, রামের ডাঙ্গা শহীদ হাবিবুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান মাদ্রাসা মাঠে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যেকের মধ্যে পঞ্চগড় পৌরসভা ও সদর উপজেলা পরিষদ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ও ভজনপুর ইউনিয়নের নিচু এলাকার দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভজনপুর ইউনিয়নের গোলাপদীগছ ও আঠারখড়ি গ্রামের কিছু পরিবার রোববার পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল। ওই দিন বিকেলে তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান তেঁতুলিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরে উপজেলা প্রশাসন তাঁদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করে। তবে সোমবার পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় অনেকেই বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পঞ্চগড় কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সোমবার বেলা তিনটায় জেলার প্রধান নদী করতোয়ার পানি বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেলে নদীর পানি ধীরে ধীরে কমবে বলে পাউবো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল মান্নান বলেন, ‘পঞ্চগড়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে আর উজানের ঢলে পানি বাড়লেও বৃষ্টি বন্ধ হলে তা আবার দ্রুতই কমে যায়। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি কোথাও মানুষ পানিবন্দী হয়েছে কি না। তবে নদীর ধারের নিচু এলাকার অল্প কিছু মানুষ পানিবন্দী হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। তাঁদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’