কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি

কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার ৫৬ ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রোববার সদর উপজেলার সারডোব এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার ৫৬ ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রোববার সদর উপজেলার সারডোব এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। দ্বিতীয় দফা বন্যায় ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দুই শতাধিক চর ও নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ। ঘরবাড়িতে পানি উঠায় অনেকে সড়ক ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র ৬২ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার ৯টি উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

এদিকে ধরলা নদীর পানির প্রবল স্রোতে সদর উপজেলার সারডোবে একটি বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সারডোব গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা জহুর উদ্দিন জানান, সকাল আটটার দিকে বাঁধটি ভেঙে পানি প্রবল বেগে ধেয়ে আসে। একে একে পাঁচটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। অনেক মালামাল ভেসে যায়। তীব্র স্রোতের কারণে নৌকা নিয়ে সেখানে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোক্তার হোসেন জানান, বাঁধটি ভাঙে যাওয়ায় হলোখানা, ভাঙামোড়, কাশিপুর, বড় ভিটা ও নেওয়াশি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম একে একে প্লাবিত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে ব্যাপক দুর্ভোগে রয়েছে তারা। মানুষকে সরিয়ে নিতে নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না। বাঁধের এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ফুলবাড়ী উপজেলা সদর ও কুড়িগ্রাম জেলা সদরে যাতায়াত করত। যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো মানুষ।

ভোগডাঙ্গা ইউপির চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বীজতলার। এই পানি বেশি দিন অবস্থান করলে বীজতলাসহ বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন খাদ্য সমস্যায় পড়বে। এই মুহূর্তে বন্যাকবলিতদের উদ্ধারসহ ত্রাণসহায়তা দরকার।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ময়নুল ইসলাম জানান, পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেখানে দুটি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাউবোর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, বাঁধটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে। তবে বিকল্প বাঁধটি রক্ষার জন্য বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছিল, কিন্তু পানির প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত বাঁধটি ভেঙে যায়।

জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় ৪৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৪০০ মেট্রিক টন চাল, ১১ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।