রিজেন্টের মো. সাহেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। ফাইল ছবি
মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। ফাইল ছবি

অর্থ আত্মসাতের পৃথক দুটি মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাঈনুল ইসলাম আজ সোমবার এই আদেশ দেন।

আদালত সূত্র বলছে, সাইফুল্লাহ মাসুদ নামের একজন ব্যবসায়ী ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির হয়ে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে পৃথক দুটি মামলা করেন। একটি মামলায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। অন্য মামলায় ২ কোটি ৫৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। আদালত মামলার বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন এবং মামলা দুটি আমলে নিয়ে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সাহেদকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার বাদীর প্রতিষ্ঠানের নাম মাসুদ এন্টারপ্রাইজ। সাইফুল্লাহ মাসুদ ইট, বালু, পাথরের ব্যবসা করেন।

অন্যদিকে, করোনা পরীক্ষা না করেই সার্টিফিকেট দেওয়াসহ নানা অভিযোগে করা মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদকে খুঁজছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ওই মামলায় তিনি পলাতক। ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের ৯ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন কিশোর আসামি।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন তরিকুল ইসলাম, রিজেন্ট হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহসান হাবীব, হেলথ টেকনিশিয়ান আহসান হাবীব হাসান, হেলথ টেকনোলজিস্ট হাতিম আলী, রিজেন্ট গ্রুপের প্রকল্প প্রশাসক রাকিবুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ কর্মকর্তা অমিত বণিক, রিজেন্ট গ্রুপের গাড়িচালক আবদুস সালাম ও নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রশীদ খান।

এর আগে করোনা পরীক্ষা না করেই সার্টিফিকেট দেওয়াসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিমকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে র‌্যাব।

মামলার আসামিরা হলেন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজ, রিজেন্ট হাসপাতালের কর্মী তরিকুল ইসলাম, আবদুর রশিদ খান জুয়েল, মো. শিমুল পারভেজ, দীপায়ন বসু, আইটি কর্মকর্তা মাহবুব, সৈকত, পলাশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহসান হাবীব (১), হেলথ টেকনিশিয়ান আহসান হাবীব (২), হেলথ টেকনোলজিস্ট হাতিম আলী, অভ্যর্থনাকারী কামরুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের প্রকল্প প্রশাসক মো. রাকিবুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ কর্মকর্তা অমিত বণিক, রিজেন্ট গ্রুপের গাড়িচালক আবদুস সালাম ও নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রশিদ খান।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে হাসপাতালের শাখা দুটির (উত্তরা ও মিরপুর) কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশের কথা বলা হয়। পরে দুটি হাসপাতাল সিলগালা করে দেওয়া হয়।

গত সোমবার র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রিজেন্ট হাসপাতালের দুটো শাখায় (উত্তরা ও মিরপুর) অভিযান চালায়। এ সময় হাসপাতালটির ব্যবস্থাপকসহ আটজনকে আটক করে। তাঁদের মধ্যে একজন কিশোর।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিন ধরনের অভিযোগ ও অপরাধের প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন। প্রথমত, তারা করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করত। এ ধরনের ১৪টি অভিযোগ র‍্যাবের কাছে জমা পড়ে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার। সরকার এই ব্যয় বহন করবে। কিন্তু তারা রোগীপ্রতি লক্ষাধিক টাকা বিল আদায় করেছে। পাশাপাশি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে এই মর্মে সরকারের কাছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি বিল জমা দেয়। সারোয়ার আলম আরও বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল এ পর্যন্ত শ দুয়েক কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তৃতীয় অপরাধ হলো, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের তারা কোভিড পরীক্ষা করবে বিনা মূল্যে। কিন্তু তারা আইইডিসিআর, আইটিএইচ ও নিপসম থেকে ৪ হাজার ২০০ রোগীর বিনা মূল্যে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে এনেছে।

সারোয়ার আলম জানান, রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স ২০১৪ সালে শেষ হয়ে যায়। এরপর আর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।