১২ বছরে হাজার নারী পাচার করেন তিনি

মোহাম্মদ আজম খান
মোহাম্মদ আজম খান

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য ছিলেন একসময়। দলনেতা মারা যাওয়ার পর শুরু হয় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। এলাকায় টিকতে না পেরে পালিয়ে যান তিনি। শ্রমিক হিসেবে ঠাঁই নেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। একসময় যুক্ত হন হোটেল ব্যবসায়। ড্যান্স বারে নৃত্য করার জন্য দেশ থেকে তরুণীদের নিয়ে যেতে শুরু করেন।

এই সন্ত্রাসী, মানব পাচারকারী হলেন মোহাম্মদ আজম খান ওরফে মোজাহার। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাঁকে গ্রেপ্তারের পর বলছে, আরব আমিরাতে চারটি হোটেলের মালিক তিনি। আর গত ১২ বছরে সহস্রাধিক নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সম্প্রতি দুবাই পুলিশ আজম খানের ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায়। দেশটি তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়। একটি এক্সিট পাস নিয়ে আজম বাংলাদেশে চলে আসেন। তারপর থেকে আত্মগোপনে যান। রোববার সিআইডি প্রেস কনফারেন্স করে আজম ও তাঁর দুই সহযোগী আল আমিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড এবং আনোয়ার হোসেন ওরফে ময়নাকে গ্রেপ্তারের খবর জানায়। গতকাল সোমবার আজম খান এবং আলা আমিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা প্রথম আলোকে বলেন, আজম খানের বাবা আরব আমিরাতে শ্রমিক হিসেবে গিয়েছিলেন। তিনিই পরবর্তী সময়ে আজমকে সেখানে নিয়ে যান। আজম পুলিশকে জানিয়েছেন, সেখানে তাঁদের মুদিদোকান ছিল। ২০০৮ সাল থেকে তিনি হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। ১২ বছরের ব্যবধানে ৪টি হোটেলের মালিক বনে যান।

আজম খানের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। তাঁর দুই ছেলে রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফটিকছড়িতে ২২টি সন্ত্রাসী বাহিনী সক্রিয় ছিল। আজম খান ছিলেন শিবিরের ওসমান বাহিনীর সদস্য। মোহাম্মদ ওসমান ২০০৩ সালের শেষের দিকে পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে মারা যান। ওই সময় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। এতে টিকতে না পেরে ২০০৪ সালে ফটিকছড়ি থেকে পালিয়ে আরব আমিরাতে আশ্রয় নেন আজম খান।

সিআইডি বলছে, দেশে ৬টি হত্যা মামলাসহ আজম খানের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে। তিনি ছাড়াও এ কাজে দুবাইয়ে তাঁর সঙ্গে আরও দুই ভাই যুক্ত ছিলেন। এই দলে ভারত ও পাকিস্তানের দলগুলোও যুক্ত।

>আজম খানের বিরুদ্ধে ৬টি হত্যাসহ ১৫ মামলা। এক হাজার নারী পাচার করেছেন। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, আরব আমিরাতে চলে গেলেও দেশে আজমের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার পর আজম বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। বছর কয়েক আগে জিয়া আদর্শ একাডেমি নামের একটি সংগঠন বানিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি হন তিনি। দেশে ফিরলে ওই সংগঠনের ব্যানারে নানা কর্মসূচির আয়োজন করতেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতারা তাতে যোগ দিতেন। সর্বশেষ দেশে করোনার বিস্তার ঘটলে ওই সংগঠনের নামে এলাকায় পোস্টার সেঁটে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেন তিনি।

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৭ সালে জমি কেনাবেচার নামে প্রতারণার ঘটনায় আজম খান ও তাঁর এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৫ সালে ওই মামলার রায়ে তাঁদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়।

ওসি বাবুল আক্তার আরও জানান, আজম নিয়মিত দেশে আসতেন। করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে নিজ এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ত হন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন।