বগুড়ায় বন্যায় সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দী

চার সন্তান নিয়ে ফকিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন জোসনা বেগম ও মুরাদ হোসেন দম্পতি। বিদ্যালয়ের পাশেই তাঁদের বাড়িতে বুকসমান পানি। আশ্রয় নেওয়া বিদ্যালয়ের নিচতলায় পানির স্রোত। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফকিরপাড়া এলাকায়। ছবি: সোয়েল রানা
চার সন্তান নিয়ে ফকিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন জোসনা বেগম ও মুরাদ হোসেন দম্পতি। বিদ্যালয়ের পাশেই তাঁদের বাড়িতে বুকসমান পানি। আশ্রয় নেওয়া বিদ্যালয়ের নিচতলায় পানির স্রোত। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফকিরপাড়া এলাকায়। ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়ায় যমুনা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্বক অবনতি ঘটেছে। ২৪ ঘণ্টায আরও ৩৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে এখন বিপৎসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৩ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের প্রায় সোয়া ১ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

বসতবাড়ি বুকসমান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, গুচ্ছগ্রাম ও উঁচু জায়গায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে কয়েক হাজার পরিবার। অনেকেই নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করছে। বানভাসি মানুষের মধ্যে রয়েছে খাদ্য ও খাবার পানির সংকট, নেই টয়লেটের সুবিধা। যমুনায় প্রবল স্রোতের সঙ্গে ভাঙছে চরের পর চর। যমুনায় বিলীনের পথে ২৭ লাখ টাকায় সদ্য নির্মিত উত্তর শিমুলতাইড় কমিউনিটি ক্লিনিকের পাকা ভবনটি।

এদিকে যমুনায় পানিবৃদ্ধি অব্যহত থাকায় তা গত বছরের রেকর্ড ভাঙার অপেক্ষায়। গত বছরের ১৮ জুলাই যমুনায় সর্বোচ্চ বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়ায় যমুনা নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ১৬ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় এখানে পানি প্রবাহিত হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।

পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ সকাল ৬টায় এখানে ১৭ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছে। অর্থাৎ যমুনায় তখন পর্যন্ত বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৩৮ সেন্টিমিটার। বেলা ৩টায় আরও পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দু–একদিনের মধ্যেই গতবারের পানি বৃদ্ধির রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বন্যার পানিতে ফকিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচতলা ডুবে গেছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফকিরপাড়া এলাকায়। ছবি: সোয়েল রানা
বন্যার পানিতে ফকিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচতলা ডুবে গেছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফকিরপাড়া এলাকায়। ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়া জেলা প্রশাসকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, আজ পর্যন্ত বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ১৫০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা ৩০ হাজার ৬২২। বন্যায় দুর্ভোগে পড়েছে বর্তমানে ১ লাখ ২২ হাজার ৩২০ জন মানুষ। পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে কৃষকের প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমির পাট-ধান, বীজতলাসহ আবাদি ফসল।

সবেচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলের মানুষ। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেল মিয়া বলেন, এই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১২৩টি গ্রাম বন্যা প্লাবিত হয়েছে। এতে ২৫ হাজার ৭৫০ পরিবারের ১ লাখ ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। যমুনার দুর্গম ৮২টি চর যমুনার ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে স্কুল-কমিউনিটি ক্লিনিকসহ প্রায় বসতবাড়ি। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে, চরের শুকনা জায়গায় খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন প্রায় ৩ হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমির পাট-ধান, বীজতলাসহ আবাদি ফসল।

অন্যদিকে সোনাতলা উপজেলায় ৩ ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী রয়েছে ৪ হাজার ২৫০ পরিবার। দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এ ছাড়া ধুনট উপজেলার দুটি ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার পরিবার বন্যাকবলিত।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডল জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ২০০ মেট্রিক টন চাল, ৭ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।