ভুক্তভোগীদের পরিবারকে আপাতত ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ হাইকোর্টের

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে আগুনে মারা যাওয়া ভুক্তভোগীদের পরিবারকে আপাতত ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিনের মধ্যে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে ওই অর্থ দিতে বলা হয়েছে।

পৃথক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত বলেছেন, চূড়ান্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের আগে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আপাতত ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

আগুনে পাঁচ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় পৃথক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জুন হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সমঝোতা করতে ১২ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। সেই সঙ্গে ১৩ জুলাই আদেশের জন্য দিন রাখেন। ধার্য তারিখে রিট আবেদনকারীপক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১৫ জুলাই পরবর্তী দিন ধার্য রাখেন। এ অনুসারে আজ রিটগুলো তালিকায় ওঠে। তবে ভুক্তভোগী ও রিট আবেদনকারীদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই আদেশ দেন।

গত ২৭ মে হাসপাতালটির মূল ভবনের বাইরে আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লেগে লাইফ সাপোর্টে থাকা পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়। তাঁরা হলেন, রিয়াজুল আলম (৪৫), খোদেজা বেগম (৭০), ভারনন অ্যান্থনি পল (৭৪), মো. মনির হোসেন (৭৫), মো. মাহাবুব (৫০)।

আদালতে পৃথক রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক, হাসান এম এস আজীম, মুনতাসির আহমেদ, সৈয়দ রিদওয়ান হোসেন ও নিয়াজ মোহাম্মদ মাহাবুব। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান ও কাজী এরশাদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তৌফিক সাজাওয়ার।

পরে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ১৫ দিনের মধ্যে ওই অর্থ পরিশোধ করে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আসবে। আগুনে মারা যাওয়া মনির হোসেনের পরিবারকে ইতিমধ্যে ২০ লাখ টাকা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিহত ভারনন অ্যান্থনি পলের জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজের আইনজীবী সৈয়দ রিদওয়ান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত ক্ষতিপূরণ বিষয়ে দুপক্ষকে সমঝোতা করতে বলেছিলেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবাইকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে অর্থ দিতে চেয়েছিল, এতে তাঁরা সম্মত হননি। অবশ্য নিহত মনির হোসেনের পরিবার ২০ লাখ টাকায় সমঝোতা করে। শুনানি নিয়ে আদালত চার পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ১৫ দিনের মধ্যে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

আইনজীবী ও ভুক্তভোগীদের পৃথক রিট
ওই অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া পাঁচজনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে ৩০ মে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিয়াজ মোহাম্মদ মাহাবুব একটি রিট করেন। ওই ঘটনায় বিচারিক তদন্ত চেয়ে ১ জুন আরেকটি রিট করেন রেদওয়ান আহমেদ ও হামিদুল মিসবাহ নামের দুই আইনজীবী। অগ্নিকাণ্ডে মৃত রিয়াজুল আলমের (৪৫) স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার এক কোটি টাকা অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২১ জুন অপর রিটটি করেন। প্রথম রিটের শুনানিতে ২ জুন হাইকোর্ট ইউনাইটেড হাসপাতালসহ চার কর্তৃপক্ষকে পৃথক প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। এ অনুসারে রাজউক, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের পৃথক প্রতিবেদন ১৪ জুন আদালতে জমা পড়ে। পুলিশের প্রতিবেদনে ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফিলতির কথা উঠে আসে। করোনার জন্য আলাদা করে ওই আইসোলেশন ইউনিট করতে রাজউকের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানায় সংস্থাটি। অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগী মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো বলে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে ওই দুর্ঘটনা হিসেবে বলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পৃথক প্রতিবেদন দাখিলের পর পৃথক রিট ২৯ জুন আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। ওই দিন একটি রিটে সহ–আবেদনকারী হিসেবে পক্ষভুক্ত হন আগুনে নিহত ভারনন অ্যান্থনি পলের জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজ। শুনানি নিয়ে ওই দিন আদালত ক্ষতিপূরণ বিষয়ে দুপক্ষকে সমঝোতা করতে আদেশ দেন। আর আগুনে মৃত খোদেজা বেগমের ছেলে মো. আলমগীর ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইতিমধ্যে একটি রিট করেন। পৃথক চারটি রিট আজ কার্যতালিকায় ছিল।

উল্লেখ্য, ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র অভিযোগ এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৩ জুন মামলা করেন আগুনে মারা যাওয়া ভারনন অ্যান্থনি পলের জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজ।