বন্যায় ধুনটে ৬০০ পরিবার পানিবন্দী, পায়নি ত্রাণ

কলার ভেলায় করে রান্নার চুলা নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে বানভাসি এই পরিবারটি। শিমুলবাড়ি গ্রাম, ধুনট, বগড়ুা, ১৬ জুলাই। ছবি: মাসুদ রানা
কলার ভেলায় করে রান্নার চুলা নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে বানভাসি এই পরিবারটি। শিমুলবাড়ি গ্রাম, ধুনট, বগড়ুা, ১৬ জুলাই। ছবি: মাসুদ রানা

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার ধুনট উপজেলার শহড়াবাড়িঘাট এলাকায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলায় ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের প্রায় ৬০০ পরিবার এখন পানিবন্দী। এখন পর্যন্ত তারা পায়নি সরকারি কোনো ত্রাণ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শিমুলবাড়ি গ্রামের যমুনা নদীর পুরোনো বাঁধটি ডুবে যাওয়ায়, সেখানে পানির মধ্যে বসবাস করছে প্রায় ১০০ পরিবার। অনেকেই ঘরে চৌকি উঁচু করে সেখানেই রান্নাবান্না ও ঘুমানোরা ব্যবস্থা করেছেন।
ওই বাঁধে আশ্রিত সামছুল হক, শহিদুল ইসলাম ও হারেজ আলী জানান, গত ২০ দিন ধরে তাঁদের ঘরের মধ্যে বন্যার পানি। ঘর ছেড়ে কোথাও ঠাঁই নেওয়ার জায়গা নেই তাঁদের। কিন্তু ঘরে যে ভাতটুকু রান্না করবেন, সেই জায়গাটুকো নেই। কষ্ট করে চৌকি দিয়ে মাচা তৈরি করে সেখানেই ঘুমাতে হচ্ছে।
আবদুল মজিদ জানান, সেখানকার বাসিন্দাদের জমিজমা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাই তাঁরা শহরে রিকশা–ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু করোনার ভয়ে শহর ছেড়ে সবাই এখন বাড়িতে। এ পরিস্থিতিতে কর্মহীন এসব মানুষের ঘরে এখন খাবার নেই। এর মধ্যে আবার ঘরবাড়িতে বন্যার পানি।
শিমুলবাড়ি গ্রামের অলেছা খাতুন জানান, তাঁর পরিবারে উপার্জন করার মতো কেউ নেই। নিজেই কাজ করে খেতেন। পানিবন্দী হয়ে পড়ায় কাজ হারিয়ে কয়েক দিন ধরে এখন তিনি অনাহারে রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত প্রায় ৩০ কিলোমিটার দৈঘ্য যমুনা নদী। উত্তর পাশে সারিয়াকান্দি উপজেলা ও দক্ষিণে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা। মাঝখানে ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন। দফায় দফায় ভাঙনে ধুনট উপজেলার প্রায় ১০টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে নদীর ভাঙনরোধে নির্মাণ করা হয়েছে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বাঁধের ভেতরে রয়েছে ভুতবাড়ি, পুকুরিয়া, আটারচর, শিমুলবাড়ি, শহড়াবাড়ি, বানিয়াজান, কৈয়াগাড়িসহ সাতটি গ্রাম। নদীভাঙন এলাকার অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে।

কলার ভেলায় করে রান্নার চুলা নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে বানভাসি এই পরিবারটি। শিমুলবাড়ি গ্রাম, ধুনট, বগড়ুা, ১৬ জুলাই। ছবি: মাসুদ রানা
কলার ভেলায় করে রান্নার চুলা নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে বানভাসি এই পরিবারটি। শিমুলবাড়ি গ্রাম, ধুনট, বগড়ুা, ১৬ জুলাই। ছবি: মাসুদ রানা

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, কয়েক দিন ধরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহড়াবাড়িঘাট এলাকায় বিপৎসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অনেক অংশ দিয়ে পানি চুইছে। সেসব স্থানে জরুরিভাবে বালির বস্তা ফেলে পানি বন্ধ করার কাজ চলছে বলে তিনি জানান।
ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল করিম বলেন, বন্যায় ৬০০-৭০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের তালিকার কাজ চলছে। বরাদ্দ পেলে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হবে।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মোহন্ত বলেন, দুই দিন ধরে সার্বক্ষণিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বানভাসিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার সকালে ৫০০ পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে ৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া শিশুদের মধ্যে ভিটামিনযুক্ত খাবার বিতরণ করা হবে।