বাঁধ ও সেচখাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা, সেচ ব্যাহত

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ওপর নির্মিত অবৈধ দোকানপাট। সম্প্রতি উপজেলার সুজাতপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ওপর নির্মিত অবৈধ দোকানপাট। সম্প্রতি উপজেলার সুজাতপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধ ও সেচখালগুলোর বেশ কিছু অংশ দখল করে পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ও দোকান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এতে বেড়িবাঁধটি হুমকিতে রয়েছে। খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় কৃষিজমিতে সেচ দেওয়ার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে জমিতে থাকা পানিও নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না।

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চাঁদপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় স্থানীয় লোকজন অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দখল তৎপরতার কারণে কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে গেছে। তবে পাউবোর কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে তাঁদের উদাসীন থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, পাউবোর জায়গা দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হবে। ইতিমধ্যে দখলদারদের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দিতে দখলদারদের একাধিকবার নোটিশও দেওয়া হয়েছে।

পাউবোর চাঁদপুর কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৮৮ সালে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মূল বেড়িবাঁধটি নির্মিত হয়। এই বাঁধের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এই প্রকল্পের অধীনে ২১৮ কিলোমিটার সেচখাল আছে। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ও সেচ খালের জায়গা দখল করে সেখানে অবৈধ স্থাপনা ও দোকান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় লোকজন। এর মধ্যে উপজেলার এনায়েতনগর মৌজায় ৯, মমরুজকান্দি মৌজায় ২৯, এখলাশপুর মৌজায় ৭৪, চান্দ্রাকান্দি মৌজায় ১১, ষাটনল মৌজায় ৪৩, ছেংগারচর মৌজায় ১০ ও রামদাসপুর মৌজায় ২৬ ব্যক্তি পাঁচ শতাধিক দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।

সম্প্রতি মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধের এনায়েতনগর, মমরুজকান্দি, সুজাতপুর, এখলাশপুর, বকুলতলা, মোহনপুর, বেলতলী, চান্দ্রাকান্দি, কালিপুর, ষাটনল, ছেংগারচর, বদরপুর, রামদাসপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকার বেশ কিছু জায়গা অবৈধভাবে দখল করে দোকান ও ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বাঁধটি হুমকিতে রয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন উপজেলার ষাটনল এলাকার আবুল কাশেম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাউবোর কিছু খালি জায়গা পেয়ে দোকান দিয়েছেন। পাউবোর অনুমতি নিতে হয় কি না, তা তিনি জানেন না।

উপজেলার রামদাসপুর ও এনায়েতনগর এলাকার চার ব্যবসায়ী বলেন, বেড়িবাঁধের পাশে দোকান নির্মাণ করে তাঁরা ব্যবসা করছেন। অনেকেই এটি করেছেন, এখনো করছেন। এতে বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়নি। এ ব্যাপারে পাউবোর কর্মকর্তারা কখনো তাঁদের কিছু বলেননি।

ওই সেচ প্রকল্পের ফতেপুর-সিপাহীকান্দি ও ছেতালিয়া এলাকার পানি ব্যবহারকারী দলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী অভিযোগ করেন, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বেড়িবাঁধ ও আশপাশের জায়গা এবং সেচখাল দখল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। এতে বাঁধটি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্মাণের পর এ পর্যন্ত দুবার বেড়িবাঁধটি ভেঙেও গেছে। প্রতি বর্ষায় হুমকির মুখে থাকে বাঁধটি। গত বছর বাঁধটির কিছু সংস্কারকাজ হলেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না পাউবো কর্তৃপক্ষ।