সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চলে: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হয় দেশ এবং বিদেশ থেকে। যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয় তখন তাঁরা ফেসবুক এবং ইউটিউবের আশ্রয় নেন। সেটির মাধ্যমে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করে।

তথ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, এগুলোতে বেশি কান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কেউ যদি সেরকম করে সেটি নিয়ে মাতামাতি করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা সবাই শতশত বছর ধরে ভাই ভাইয়ের মতো ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও হাজার বছর ধরে থাকব।

আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সব ধর্মের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এই মন্তব্য করেন।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। লাল সূর্যখচিত সবুজ পতাকায় জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ। আজকে আমরা মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান যেভাবে সুন্দর করে বসেছি আমাদের বাংলাদেশও ঠিক এরকম সুন্দর। আমাদের রাঙ্গুনিয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আরও সুন্দর।

হাছান মাহমুদ বলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পকে চিরতরে বিদায় করার লক্ষ্যেই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পাকিস্তান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম। তাই এই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যারা ছড়ায় তারা প্রকৃতপক্ষে মানবতা ও বাংলাদেশের শত্রু।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যঅন ট্রাস্টের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন আলকাদেরী, রাঙ্গুনিয়া সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতির সভাপতি ধর্মসেন মহাস্থবির, সাধারণ সম্পাদক সুমঙ্গল মহাথের, রাঙ্গুনিয়া বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি জ্ঞানবংশ মহাথের, সৈয়দবাড়ি ধর্মপ্রবর্তন বিহারের অধ্যক্ষ পরমানন্দথের। হিন্দু ধর্মীয় পুরোহিত সুজন চক্রবর্তী, অসিম চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য আঞ্চলিক চার্চ সংঘের প্রধান পালক রেভারেন্ড সহখরীয় বৈরাগী, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আইয়ুব নুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।


হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তাঁর নেতৃত্বে আমরা কীভাবে অসাম্প্রদায়িকতাকে লালন করতে হয় কীভাবে মুসলমান, হিন্দু , বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ভাই ভাইয়ের মতো মিলিত হয়ে চলতে হয় সেই শিক্ষা আমরা পেয়েছি। আমাদের রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি গ্রামের চিত্র হচ্ছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলমান একযোগে সুন্দরভাবে বসবাস করছে। আমার গ্রাম সুখবিলাসে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীস্টানের পাশাপাশি চাকমা মারমারাও আছে। আমরা যেভাবে শতশত বছর ধরে একসাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বসবাস করছি সেটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ। তাই কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা কোনো গোষ্ঠীর কারণে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে না।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে বাঙালি, আমাদের দ্বিতীয় পরিচয় কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিস্টান। এটিই হচ্ছে যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের সঙ্গে যারা বিএনপি-জামায়াত করেন তাদের পার্থক্য। আমি ২০০৮ সালে যখন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি তখন আমার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিল স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রধান এজেন্ট ছিলেন। এটির কারণ হলো উনি হিন্দু নাকি বৌদ্ধ নাকি মুসলিম এটি আমার বিবেচনায় নেই। এটি বিবেচ্য বিষয়ও নয়। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে উনি আমার দলও আমাদের নেত্রীর প্রতি আস্থাশীল ও অনুগত কিনা।

সব ধর্মীয় নেতাদের প্রতি শান্তির জনপদ রাঙ্গুনিয়াকে আরো শান্তিময় ও প্রীতিময় করার অনুরোধ জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ফেসবুকে কে একটা লিখলো সেটা নিয়ে অন্যরা লেগে থাকবো এটাও হতে পারে না। আমাদের কাছে কে কোন ধর্মাবলম্বী সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, কে মানুষ কে বাঙালি সেটা বিবেচ্য বিষয়। তাই সকলের কাছে অনুরোধ কোন ব্যক্তির কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে না। সেই লক্ষ্যে যেকোনো অশুভ শক্তির ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যেন এই সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, কদিন আগে রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়নের জন্য আমাকে সরকার থেকে এক কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়। তখন আমি ভাগ করে সেখান থেকে চল্লিশ লাখ টাকা দিয়েছি মন্দির, বিহারসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ের জন্য। প্রধানমন্ত্রীকে বলে স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়াকে পরপর দুবার বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে। একইভাবে পরপর তিনবার হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্টের সদস্য করেছিলাম শ্রীযুক্ত রাখাল চন্দ্র দাশ গুপ্তকে। রাঙ্গুনিয়ায় ইসলাম ধর্মের জন্যও অনেক কাজ করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি করে নতুন মসজিদ করা করা হয়েছে। শতাধিক মসজিদ ভিত্তিক মক্তব করা হয়েছে। প্রতিটি মাদ্রাসায় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষভাবে টাকা এনে হিন্দু ধর্মীয় মন্দির ও বৌদ্ধ বিহারগুলোর উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী নিজের জীবনের সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ টেনে বলেন, আমি যখন ছাত্রজীবনে ঢাকায় যেতাম তখন আমি কমলাপুর বৌদ্ধ বিহারে থাকতাম। সেখানকার গুরুভান্তে সদ্য প্রয়াত শুদ্ধানন্দ মহাথেরো'র বাড়ি আমাদের এলাকায়। আমার বাবার সমসাময়িক। আমি তাঁকে পিতার মতো শ্রদ্ধা করতাম। তিনিও আমাকে সন্তানের মতো আদর করতেন। এটার মধ্যে কোনো খাদ ছিল না। দিনের বেলা না খেলেও রাতের বেলা সেখানে খেতাম। একথা আমি ঢাকায় বৌদ্ধ মন্দিরসহ সবখানে বলেছি। মানুষ বড় হলে অতীতের কথা বলেনা, ভুলে যায়।