ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চার কারণে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সম্প্রতি কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সম্প্রতি কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহার করার বিষয়গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অধিকাংশ মানুষ এসব বিধি মানছেন না। এ কারণে এ জেলায় জুন ও জুলাই মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। মূলত চারটি কারণে এ জেলায় কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জেলায় চার কারণে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা, মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা ও অসচেতনতা।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার ৯ উপজেলায় আজ শনিবার বিকেল ছয়টা পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৭০২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৮৩৭ জনই গত জুন মাসে এবং চলতি মাসের ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৭ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩৪ জন। ১ জুন থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ৪৭ দিনে মোট সংক্রমিত হয়েছেন ১ হাজার ৫৭১ জন, যা মোট আক্রান্তের সংখ্যার ৯২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র আরও জানায়, জেলায় প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ১০ এপ্রিল। করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার প্রথম ৫২ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩১ জন। শুধু জুন মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩৭ জন, যা ১০ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৫২ দিনের তুলনায় ছয় গুণের বেশি। জুন মাসে প্রতিদিন ২৭ জনের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। চলতি মাসের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন ৪৩ জনের বেশি রোগী কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়েছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এপ্রিল মাসে ৪৩ ও মে মাসে ৮৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় এপ্রিল মাসে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ, মে মাসে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ, জুন মাসে ৪৯ দশমিক ১৭ শতাংশ ও চলতি জুলাই মাসে ৪৩ দশমিক ১২ শতাংশ রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া ১ হাজার ৭০২ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৯৮ জন। এঁদের মধ্যে মারা গেছেন ২৯ জন। এর মধ্যে জুনে ১৩ জন, এপ্রিলে ২ জন এবং বাকি ১৪ জন চলতি মাসের ১৭ দিনে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা ১২ হাজার ৮৭০ জনের নমুনার মধ্যে ১২ হাজার ১২৪ জনের প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা ও নবীনগর পৌরসভার ১১টি ওয়ার্ড রেড জোন হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার, গতকাল শুক্রবার ও আজ সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার প্রধান সড়ক টিএ রোডের কাউতলী থেকে কুমারশীল মোড় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটারে বিভিন্ন বয়সের মানুষ অবাধে চলাফেরা করছেন। অনেকেই মাস্ক পরেননি। এই সড়কে অতিরিক্ত ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। কিন্তু এসব যানে যাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল চত্বরেও করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে আসা ব্যক্তিদের সামাজিক দূরত্ব না মেনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই মাস এখনো শেষ হয়নি। তাই আমাদের পর্যবেক্ষণে জুন মাসেই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ঈদের সময় মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা, মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা ও অসচেতনতার কারণে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে।’ তিনি জানান, করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চাইলে সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজের ঘরেও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাইরেও সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় শিষ্টাচার মানতে হবে।