নরসিংদীতে কোভিডে আক্রান্ত ৮৪ শতাংশ মানুষ এখন সুস্থ

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

নরসিংদীতে জেলাজুড়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮৪ শতাংশের বেশি এরই মধ্যে সুস্থ হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী জেলায় মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৬০৬ জন রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৫২ জন ব্যক্তি।

গতকাল প্রথম আলোর কাছে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের দিকনির্দেশনা মেনে চলা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশের জটিল উপসর্গ না থাকায় তুলনামূলকভাবে করোনা রোগীরা দ্রুত সেরে উঠছেন। জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যার যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। সকলের সমন্বিত উদ্যোগ আর পরিশ্রমের সুফল পাচ্ছে নরসিংদীবাসী।
সংক্রমণের প্রথম পর্যায় থেকেই সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডি​সিআর) নরসিংদীকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ​চিহ্নিত করেছিল। বহু চেষ্টা করেও নরসিংদীকে অবরুদ্ধ রাখতে না পারা এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে না পারায় করোনার সংক্রমণ দিন দিন বেড়েছে। জেলাজুড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তালিকায় ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ।
এই সময়ের মধ্যে জেলাজুড়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৮ জনের। ৪৫ জন ছাড়া সবার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানা গেছে। এর মধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন ১ হাজার ৬০৬ জন। ৯০ শতাংশই নিজেদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। অন্যরা কোভিড ডেডিকেটেড ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল ও বিভিন্ন উপজেলা কমপ্লেক্সসহ রাজধানীর ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জেলার ছয় উপজেলায় সুস্থতার হার হিসাব করে দেখা গেছে, সদর উপজেলায় ৯৯৪ জনের মধ্যে ৮৫৭ জন, শিবপুরে ১৪৯ জনের মধ্যে ১২৯ জন, পলাশে ১৩২ জনের মধ্যে ১১৯ জন, রায়পুরায় ১২৪ জনের মধ্যে ১০১ জন, বেলাবতে ১০৩ জনের মধ্যে ৮০ জন এবং মনোহরদীতে ১০৪ জনের মধ্যে ৬৬ জন সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলায়, কিন্তু সুস্থতার হার সবচেয়ে বেশি পলাশ উপজেলায় এবং সবচেয়ে কম মনোহরদী উপজেলায়।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে ১ হাজার ২০০ জনই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ১৮ জন আক্রান্ত ব্যক্তি কোভিড ডেডিকেটেড ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন। তবে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জেলার তালিকাভুক্ত ৩৯ জন। তাঁদের মধ্যে সদর উপজেলার ২৩ জন, বেলাব উপজেলার ৬ জন, রায়পুরা উপজেলায় ৫ জন, মনোহরদী উপজেলা ও পলাশ উপজেলায় ২ জন করে এবং শিবপুর উপজেলায় ১ জন রয়েছেন।
সাখাওয়াৎ জামিল নরসিংদী জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর কর্মস্থলের ডরমেটরিতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চার সহকর্মী একই দিনে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর ডরমেটরিতেই আইসোলেটেড অবস্থায় ছিলাম। বিশেষ শারীরিক জটিলতা তৈরি না হওয়ায় হাসপাতালে যেতে হয়নি। চিকিৎসক ও সহকর্মীদের সহযোগিতা ও সমর্থন ওই দিনগুলোতে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল।’
সুস্থ হয়ে ওঠা বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা জানান, করোনায় আক্রান্ত হলে কোনো প্রকার ভয় না পেয়ে মনোবল দৃঢ় রাখতে হবে। জটিল কোনো উপসর্গ দেখা না দিলে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করলে বাড়িতে থেকেই কোভিড-১৯ রোগ থেকে সেরে ওঠা সম্ভব। জটিল কোনো উপসর্গ দেখা না দিলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই।