শেরপুরে এক ইউএনওর মহানুভবতা

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু জান্নাতুল মাওয়ার জন্য রক্ত দান করছেন শেরপুরের নকলার ইউএনও জাহিদুর রহমান। শনিবার সন্ধ্যায় তোলা ছবি। প্রথম আলো
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু জান্নাতুল মাওয়ার জন্য রক্ত দান করছেন শেরপুরের নকলার ইউএনও জাহিদুর রহমান। শনিবার সন্ধ্যায় তোলা ছবি। প্রথম আলো

‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে’ কিংবদন্তি শিল্পী ভূপেন হাজারিকার গানের এই কথাগুলো যে কত সত্যি, তা আবার প্রমাণ করলেন জাহিদুর রহমান। জাহিদুর শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। আজ শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু জান্নাতুল মাওয়াকে এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন।

ব্লাডব্যাংক অব নকলা ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জান্নাতুল মাওয়া নকলা শহরের লাভা এলাকার মমিন মিয়ার মেয়ে। তাঁর বয়স ছয় বছর। সে একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মমিন ঢাকার কুর্মিটোলায় আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য হিসেবে কর্মরত। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জান্নাতুল মাওয়া থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়। তার রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। এরপর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রতি মাসে তার শরীরে রক্ত দিতে হচ্ছে।

জান্নাতুলের জন্য প্রতি মাসে রক্ত সংগ্রহের কাজে সহযোগিতা করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্লাডব্যাংক অব নকলা ও বিডি ক্লিন নকলা। সংগঠন দুটি চলতি মাসের রক্তের জন্য অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু রক্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এতে শিশু জান্নাতুলের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। একপর্যায়ে বিষয়টি জানতে পারেন ইউএনও জাহিদুর রহমান। তাঁর রক্তের গ্রুপও বি পজিটিভ। এরপর এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি জান্নাতুলের জন্য রক্তদানে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ইউএনও জাহিদুরের এমন আগ্রহে সংগঠন দুটি ও শিশুটির পরিবারের সদস্যরা আশার আলো দেখেন। এরপর আজ শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে ইউএনও জাহিদুর রহমান শিশু জান্নাতুলকে এক ব্যাগ রক্ত দান করেন। এ সময় বিডি ক্লিন নকলার সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল আমিন, ব্লাডব্যাংক অব নকলার সদস্য ফজলে রাব্বি, নাহিদুল ইসলাম, রাকিবুর রহমান, সাব্বির আলম ও জান্নাতুল মাওয়ার মা ফারজানা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

জান্নাতুল মাওয়ার মা ফারজানা বেগম শনিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউএনও স্যার আমার মেয়েকে রক্ত দিয়েছেন। এ জন্য আমরা খুব খুশি ও তাঁর কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাঁর মঙ্গল করুন।’

জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রজীবনে তিনি তিনবার রক্ত দিয়েছিলেন। চাকরিজীবনে এই প্রথম রক্ত দিলেন। একটি শিশুর জীবন বাঁচাতে রক্ত দিতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন।