দুই পাশে জলরাশি, মধ্যে ৬-৭ ফুট দিয়ে চলছে গাড়ি

ভেঙে সরু হয়ে যাওয়া সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। পাকশিমুল ইউনিয়নের ভূইশ্বরবাজারের দক্ষিণ পাশ থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো।
ভেঙে সরু হয়ে যাওয়া সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। পাকশিমুল ইউনিয়নের ভূইশ্বরবাজারের দক্ষিণ পাশ থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো।

হাওরের পানির আঘাতে ভাঙনের কবলে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-অরুয়াইল সড়কের একটি অংশ। এই আড়াই কিলোমিটার অংশ সংস্কার না করায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, সরাইল উপজেলার উত্তর প্রান্তে হাওর এলাকায় ১০ বছর আগে নির্মাণ করা হয় সরাইল-অরুয়াইল সড়ক। উপজেলা সদরের হাসপাতাল মোড় থেকে অরুয়াইল বাজার পর্যন্ত এ সড়কের দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার। এ পাকা সড়ক নির্মাণের ফলে উপজেলার চুন্টা, পাকশিমুল ও অরুয়াইল ইউনিয়ন এবং নাসিরনগরের চাতলপাড় ও কুন্ডা ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

কিন্তু সড়কটি নির্মাণের পর প্রয়োজনীয় তদারকি ও সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়ে যায়। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে গত জুন মাসে সড়কটির সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়। বাকি রয়েছে চুন্টা ইউনিয়নের ঘাগড়াজুর সেতু থেকে পাকশিমুল ইউনিয়নের ভূইশ্বরবাজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার অংশ। এ অংশ পুরোপুরি হাওরের মধ্যে পড়েছে। তাই এ অংশ প্রতিবছর ভাঙনের কবলে পড়ে। সড়কটির পাকা অংশের প্রস্থ ছিল ১২ ফুট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আড়াই কিলোমিটার অংশের দুই পাশে ভেঙে কোনো কোনো স্থানে এখন এর প্রস্থ আছে চার থেকে পাঁচ ফুট। বাকি অংশ পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে দুটি অটোরিকশা অতিক্রম করতে পারে না। সড়কের ভাঙন এমনই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যেকোনো সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, এটি এলাকার একমাত্র সড়কপথ। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ইজিবাইক, রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, পণ্যবাহী ট্রাক্টর, মিনি ট্রাকসহ সহস্রাধিক যানবাহন চলাচল করে।

অটোরিকশাচালক আবু মিয়া জানান, বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অনেক মানুষ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। যাত্রী নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়।

ভাঙা সড়কটি দিয়ে যান চলাচলের সময় যাত্রীরা থাকে আতঙ্কে। ছবি: প্রথম আলো
ভাঙা সড়কটি দিয়ে যান চলাচলের সময় যাত্রীরা থাকে আতঙ্কে। ছবি: প্রথম আলো

পাকশিমুল ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামের বাসিন্দা ও সমাজকর্মী এম মনসুর আলী জানান, সরাইল-অরুয়াইল সড়কটি কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর সড়কটির বড় অংশের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। শুধু আড়াই কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ না হওয়ায় এখন যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর জানান, সড়কটি রক্ষা করার জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ীভাবে বেড়া দিয়ে ইট ও বালু ফেলার কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এলজিইডি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ অংশের সংস্কারকাজের বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। করোনা–পরিস্থিতির কারণে দেরি হচ্ছে। বর্তমানে ভাঙন থেকে সড়কটি রক্ষার জন্য জরুরি তহবিল থেকে খোয়া ও বালুর বস্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।