বেশি দামেও হাসি নেই মরিচচাষির

সাঁথিয়ার ছেঁচানিয়া গ্রামের এই মরিচখেতের বেশির ভাগ মরিচগাছ শুকিয়ে মরে গেছে। মরিচখেতের দুরবস্থা দেখাচ্ছেন কৃষক আকরাম হোসেন ও আবুল হোসেন। সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো
সাঁথিয়ার ছেঁচানিয়া গ্রামের এই মরিচখেতের বেশির ভাগ মরিচগাছ শুকিয়ে মরে গেছে। মরিচখেতের দুরবস্থা দেখাচ্ছেন কৃষক আকরাম হোসেন ও আবুল হোসেন। সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো

দেশের সবজিভান্ডার বলে পরিচিত পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় কাঁচা মরিচের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সপ্তাহ দুয়ে হলো, বেশির ভাগ মরিচগাছের পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে এবং একপর্যায়ে গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে কৃষকেরা জানান। আজ সোমবার সাঁথিয়ার বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ পাইকারি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এত বেশি দাম পেয়েও ফলনের বিপর্যয়ের কারণে মরিচচাষিদের লোকসান হচ্ছে বলে জানা গেছে।

উপজেলার মরিচচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দু-তিন বছর ধরে মরিচচাষিরা ভালো দাম না পাওয়ার কারণে লোকসান দিয়ে আসছেন। ওই সময়ের মধ্যে চাষিদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে হয়েছে। কিন্তু এবার চাষিরা মৌসুমের শুরু থেকে মোটামুটি ভালো দাম পেয়ে আসছিলেন। শুরুতে ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং এরপর তাঁরা বেশ কিছুদিন ধরে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছেন। ভালো ফলনের পাশাপাশি এমন দামে চাষিরা খুশিই ছিলেন। কিন্তু তাঁদের খুশি বেশি দিন টেকেনি। কাঁচা মরিচের দাম এখন আরও বেড়ে প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় উঠলেও তাতে কৃষকের লাভ না হয়ে বরং লোকসান যাচ্ছে। বেশির ভাগ মরিচগাছে ‘পাতা কোঁকড়ানো’ রোগ হওয়ায় মরিচের ফলন এক–চতুর্থাংশের নিচে নেমে এসেছে। অনেক জায়গায় মরিচগাছ মরেও গেছে।

আজ উপজেলার বিল মহিষারচর, শামুকজানি, ছেঁচানিয়া, ঘুঘুদহ প্রভৃতি এলাকার মরিচের খেত ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ জমির মরিচগাছের পাতা কুঁকড়ে গিয়ে মরে যেতে শুরু করেছে। বেঁচে থাকা মরিচগাছে খুব অল্প পরিমাণ মরিচ ধরেছে।

বিল মহিষারচর গ্রামের মরিচচাষি নূর ইসলাম মধু বলেন, এবার দেড় বিঘা জমিতে তিনি মরিচের আবাদ করেছেন। প্রথম দিকে ভালো ফলন পেলেও দুই সপ্তাহ ধরে খেত থেকে তিনি কোনো মরিচই পাচ্ছেন না। মরিচগাছগুলোর পাতা কুঁকড়ে গেছে এবং ফুল এলেও তা শুকিয়ে যাচ্ছে। ওই এলাকার সব মরিচখেতেরই একই অবস্থা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মরিচখেতে এমন বিপর্যয় দেখা দিলেও কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তার দেখা নেই। বাধ্য হয়ে তিনি গত সপ্তাহে স্থানীয় একটি সার-কীটনাশকের দোকান থেকে সাড়ে চার হাজার টাকার কীটনাশক ও ওষুধ এনে জমিতে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভই হয়নি।

‘পাতা কোঁকড়ানো রোগে’ শামুকজানি গ্রামের এই মরিচের খেতে মরিচগাছের পাতা ও গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ফলন এক–চতুর্থাংশের নিচে নেমে গেছে। এ অবস্থায় গাছ থেকে মরিচ তুলছেন কৃষক পরিবারের সদস্যরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো
‘পাতা কোঁকড়ানো রোগে’ শামুকজানি গ্রামের এই মরিচের খেতে মরিচগাছের পাতা ও গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ফলন এক–চতুর্থাংশের নিচে নেমে গেছে। এ অবস্থায় গাছ থেকে মরিচ তুলছেন কৃষক পরিবারের সদস্যরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো

ছেঁচানিয়া গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, ‘আধা বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করছিল্যাম। এই সময়টাতেই আমাগরে লাভের মুখ দেখার কথা। অথচ বৃষ্টিতে পানি জমায় বেশির ভাগ মরিচগাছই মইর‌্যা গেছে। এখন মরিচের দাম হাজার টাকায় উঠলেও আমাগরে কুনু লাভ নাই।’

বনগ্রাম বাজারের সার ও কীটনাশকের ব্যবসায়ী ইয়াসিন আলী বলেন, ‘আমাগরে এলাকার বেশির ভাগ মরিচগাছ পাতা কোঁকড়ানো রোগে শুকায়া যাতেছে। অনেকেই এ কারণে দোকানে আইস্যা নানা ওষুধ নিতেছে। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হতেছে না।’

উত্তর অঞ্চলের অন্যতম কাঁচামালের পাইকারি হাট সাঁথিয়ার করমজা চতুর বাজারে গিয়ে কথা হয় কাঁচা মরিচের আড়ত কুদরতউল্লাহ ভান্ডারের মালিক অলিউল্লাহ খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার স্থানীয় কাঁচা মরিচে ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এই হাট থেকে গতবার এই সময় প্রতিদিন গড়ে ৮০০ মণ কাঁচা মরিচ ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছে। কিন্তু এবার ১০০ মণেরও কম যাচ্ছে।

তবে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার সাঁথিয়ায় ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। কৃষকেরা ঢালাওভাবে ফলন বিপর্যয়ের যে কথা বলছেন, বিষয়টি কিন্তু ঠিক তেমন নয়। উপজেলার উঁচু এলাকার মরিচগাছগুলো মোটামুটি ঠিক থাকলেও নিচু এলাকার মরিচের খেত বৃষ্টির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে মূলত ওই সব জমিতে ফলন কমেছে। তা সত্ত্বেও আমরা মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।’