দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী শেফালিরা
শরীয়তপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আজ সোমবার পদ্মা নদীর পানি নড়িয়ার সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর তীর উপচে জেলার ২০০টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। এসব গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বন্যার পানিতে নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে যাতায়াতের ২০টি পাকা সড়ক তলিয়ে গেছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় দুই উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গত দুদিনে অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নড়িয়ার ১৫টি, জাজিরার ১১টি, শরীয়তপুর সদরের ৮টি ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে। জেলার ৩৪টি ইউনিয়নের অন্তত ২০০ গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
আজ সোমবার জাজিরার ছিডারচর, ছুরিরচর, আকনকান্দি, দুব্বাডাঙ্গা, নাওডোবার মাঝিকান্দি, নড়িয়ার ঈশ্বরকাঠি, শেহের আলী মাদবরকান্দি, পাঠান বাড়ি, কেদারপুর, মুলফৎগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পানিবন্দী মানুষেরা চরম বিপদে। অনেকের ঘরেই শুকনা খাবার নেই। পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না করতে উঁচু মাচা ও নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে। গ্রামগুলোতে খাবার পানির তীব্র সংকট।
শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম আজ নড়িয়া ও জাজিরার বন্যাকবলিত ও ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নড়িয়া শহীদ মিনার চত্বরে তিনি পানিবন্দী মানুষের মাঝে খাদ্যসহায়তা বিতরণ করেন।
বন্যায় নড়িয়া-জাজিরা, নড়িয়া-পাঠানবাড়ি-জাজিরা, নড়িয়া-আন্ধারমানিক-জাজিরা, নড়িয়া-বিলাশপুর-জাজিরা ও নড়িয়া-মোক্তারেরচর-বিলাশপুর সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় নড়িয়ার সঙ্গে জাজিরার বিভিন্ন গ্রামে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ ট্রলার ও নৌকায় যাতায়াত করছে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তী রুপা রায় বলেন, পদ্মার তীরবর্তী গ্রামগুলোর সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক স্থানের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
পদ্মা ও মেঘনা নদীতে স্রোত থাকায় চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথে ধীরগতিতে ফেরি চলাচল করছে। ফেরি পার হতে ৪ ঘণ্টা সময় লাগছে। এ কারণে নরসিংহপুর ফেরিঘাটে গাড়ি আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিকান্দি গ্রামের শেফালি আক্তার বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে ঘরে পানি। বাড়ির উঠানে উঁচু করে গবাদিপশু রেখেছেন। আর টিনের ঘরের দোতলায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
নড়িয়ার শেহের আলী মাদবরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, এলাকার সব নলকূপ তলিয়ে গেছে। অনেক দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে রান্না করতে। রান্নাঘর তলিয়ে গেছে। নৌকায় বসে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ করা ত্রাণসহায়তা বন্যাদুর্গতদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ১৭০ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত বরাদ্দ রয়েছে, কোনো মানুষ বন্যার কারণে না খেয়ে থাকবে না।