পাঁচ কিলোমিটার হাঁটার পর মিলল খাদ্যসহায়তা

খাদ্যসহায়তা নিয়ে ভ্যানে বাড়ি ফিরছেন সনেকা বেওয়া। রোববার নাটোরের গুরুদাসপুর থানার সামনে। ছবি: প্রথম আলো
খাদ্যসহায়তা নিয়ে ভ্যানে বাড়ি ফিরছেন সনেকা বেওয়া। রোববার নাটোরের গুরুদাসপুর থানার সামনে। ছবি: প্রথম আলো

বন্যার কারণে চারদিকে পানি। কারও কাছ থেকে সহায়তা পাননি এক হতদরিদ্র নারী। জনপ্রতিনিধিরাও তাঁকে ত্রাণ দেননি। ঘরে চাল-ডাল কিছু নেই। ক্ষুধার জ্বালায় টিকতে পারছিলেন না। উপায় না পেয়ে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা শহরে চলে আসেন তিনি। সেখানে গিয়েও কোনো কিছু জোগাড় করতে পারছিলেন না তিনি। অবশেষে থানায় হাজির হন তিনি। পুলিশ তাঁকে চাল, ডালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী দেয়। মুখে হাসি ফোটে তাঁর।

ওই বন্যাদুর্গত নারীর নাম সনেকা বেওয়া (৫৫)। তিনি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের প্রয়াত ইউসুফ আলীর স্ত্রী। ১০ বছর আগে মারা যান ইউসুফ। তবে সরকারি কোনো সুবিধা পান না তিনি। থাকার ঘরটিও জীর্ণশীর্ণ। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে জীবন যাপন করছেন। করোনার কারণে সেই কাজও বন্ধ। তাই মহাবিপদে পড়েন তিনি। বাড়িতে খাবার না থাকায় রোববার দুপুরে উপজেলা সদরে এসে থানায় হাজির হন তিনি। পরে সনেকার সমস্যার কথা শুনে গুরুদাসপুর থানা–পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল ও ১ কেজি আলু ও কিছু নগদ টাকা দেওয়া হয়। আবদুল হান্নান নামের একজন এএসআইয়ের মাধ্যমে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয় সনেকা বেওয়াকে।

সনেকা বেওয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে গুরুদাসপুর থানার ওসি মোজাহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, ‘রোববার পর্যন্ত ঘরে এক কেজি চাল ছিল। সারা দিনের জন্য সকালে ভাত রান্না করেছিলেন সনেকা। এরপর তিনি কী খাবেন, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি। হাতে ভ্যান ভাড়ার টাকা পর্যন্ত ছিল না তাঁর কাছে। নিতান্তই পেটের তাগিদে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে থানায় আসেন সনেকা বেওয়া। ওসি আরও বলেন, সনেকার চেহারায় অভাবের ছাপ ছিল। তাঁর (ওসি) কক্ষে ঢুকতে পারছিলেন না নিরাপত্তা প্রহরীদের বাধার কারণে। থানার সামনে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। পরে তাঁর কান্নার শব্দ শুনে তাঁকে ভেতরে আসার অনুমতি দেন তিনি (ওসি)। এ সময় তাঁর দুঃখ-কষ্টের কথা তিনি পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে খাদ্যসামগ্রী ও টাকা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সনেকা বেওয়া অভিযোগ করেন, নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক একজন চেয়ারম্যানের সমর্থক তিনি। এ কারণে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শওকত রানা তাঁকে সরকারি কোনো সহায়তা দেন না। অন্যের বাড়িতে কাজ করেন তিনি। কিন্তু বন্যা ও করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন কাজও করতে পারছেন না তিনি।

সনেকার অভিযোগ প্রসঙ্গে নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শওকত রানা বলেন, সনেকার অবস্থা সম্পর্কে জানা নেই তাঁর। তা ছাড়া সহায়তা পেতে সনেকা তাঁর কাছে কখনো আসেননি।

গুরুদাসপুর থানার ওসি মোজাহারুল ইসলাম বলেন, পুলিশের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে অনেক মানুষের। সেই ভুল ধারণা বদলাতে স্বাভাবিক দায়িত্বের বাইরেও মানবিক কাজগুলো করছে পুলিশ। এ দায়িত্ববোধ থেকেই অসহায় সনেকার প্রতি সদয় হয়েছে পুলিশ।