বাঁধ দিয়ে মেঘনার ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টায় তরুণেরা

মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে বাঁশ, গাছ ও গাছের ডালপালা দিয়ে ‘জংলা বাঁধ’ নির্মাণ করছেন এলাকার তরুণেরা। ইতিমধ্যে এক হাজার মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ বাজারসংলগ্ন মেঘনার পাড়ে। ছবি: প্রথম আলো
মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে বাঁশ, গাছ ও গাছের ডালপালা দিয়ে ‘জংলা বাঁধ’ নির্মাণ করছেন এলাকার তরুণেরা। ইতিমধ্যে এক হাজার মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ বাজারসংলগ্ন মেঘনার পাড়ে। ছবি: প্রথম আলো

তিন যুগ ধরে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উপায় না দেখে নিজেদের বসতভিটা রক্ষায় নদীতে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন এলাকার তরুণেরা। গত ২৬ জুন থেকে শতাধিক তরুণ স্বেচ্ছাশ্রমে কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ বাজারে বাঁধের কাজ শুরু করেন। বাজারের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে মেঘনার তীরে তিন কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। বাঁধের কাজ শেষ করতে আরও ১৫-২০ দিন লাগতে পারে।

তরুণেরা জানান, তিন কিলোমিটার বাঁধ দিতে ব্যয় হবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে এক হাজার মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁশ, গাছ ও গাছের ডালপালা দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজে সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মেঘনার ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা।

৩ জুলাই এই বাঁধ নির্মাণকাজ পরিদর্শনে আসেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। এ সময় তাঁরা এলাকাবাসীর এ উদ্যোগে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

বাঁধ নির্মাণের উদ্যোক্তা কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী মো. জসিম উদ্দিন জানান, নদীভাঙনে চর কালকিনি প্রায় বিলীন। শেষমেশ বিলীন হতে চলছে নাছিরগঞ্জ বাজার। এতে এলাকাবাসী দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। নিরুপায় হয়ে তাঁরা এ বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এলাকার তরুণেরা বিভিন্ন স্থান থেকে ঝোপঝাড়, গাছপালা সংগ্রহ করে বাঁধ নির্মাণ করছেন। এখন বাঁধ নির্মাণকাজে সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও।

স্থানীয় সংবাদ কর্মী জুনাইদ আল হাবিব জানান, ‘জংলাবাঁধ মূলত লেখালেখির ফসল। নাছিরগঞ্জে গিয়ে দেখি, বাজারটা ভেঙে যাচ্ছে। এরপর কয়েকটা ছবি তুলে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, চর কালকিনির নাছিরগঞ্জ নদীতে ভেঙে গেলে হুমকিতে পড়বে পার্শ্ববর্তী চর মার্টিন ও চর লরেন্স। নাছিরগঞ্জ এখন বিলীনের পথে। পরে দেখলাম, আমার ছবি ও স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। সবাই একে একে দাবি তুলতে থাকে। একপর্যায়ে তরুণদের মধ্যে এলাকাটি রক্ষার চিন্তা জেগে ওঠে। পরে তাঁরা নিরুপায় হয়ে এ জংলাবাঁধের উদ্যোগ নেয়। এখন যা দৃশ্যমান।’

মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে বাঁশ, গাছ ও গাছের ডালপালা দিয়ে ‘জংলা বাঁধ’ নির্মাণ করছেন এলাকার তরুণেরা। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ বাজারসংলগ্ন মেঘনার পাড়ে। ছবি: প্রথম আলো
মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে বাঁশ, গাছ ও গাছের ডালপালা দিয়ে ‘জংলা বাঁধ’ নির্মাণ করছেন এলাকার তরুণেরা। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ বাজারসংলগ্ন মেঘনার পাড়ে। ছবি: প্রথম আলো

এলাকাবাসী জানান, সদর উপজেলা থেকে রামগতি পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ কিলোমিটার এলাকায় নদীর তীর রক্ষা বাঁধ রয়েছে। কিন্তু অরক্ষিত ৩২ কিলোমিটার এলাকা ধীরে ধীরে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা নদীশাসনের কাজ করার কথা বললেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। গত ঈদুল ফিতরের দুই দিন আগে চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর আগে বিদ্যালয় ভবনটির অর্ধেক নদীতে ভেঙে পড়ে।

অন্যদিকে রামগতি উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নের বয়ারচরের টাংকি বাজার এলাকায় একটি বিশাল ঝাউবাগান ছিল। ওই বাগানটি সব সময় পর্যটনমুখর ছিল। ২০১৯ সালের শেষের দিকে পুরো ঝাউবাগানটি মেঘনার বুকে বিলীন হয়ে যায়।

চর মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাশেম হাওলাদার জানান, বসতভিটা হারিয়ে তিন যুগে কয়েক লাখ মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্পের কাজ শুরু করার জন্য আন্দোলন–সংগ্রাম করেও কোনো কাজের কাজ হয়নি। তাই নিজেদের বসতভিটা ও গ্রামকে রক্ষা করতে এলাকার তরুণেরা নিজেদের অর্থে ও স্বেচ্ছাশ্রমে জংলা বাঁধের উদ্যোগ নেয়।

জানতে চাইলে ইউএনও মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ‘জংলা বাঁধটি পরিদর্শন করেছি। তরুণ ও এলাকাবাসীর সম্মিলিত উদ্যোগে এ কাজটি চলছে। মেঘনার ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’