বসতঘরে পানি, মহাসড়ক-বাঁধে বসবাস

তিস্তার প্রবল স্রোতে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুরহেলান বাঁধ ভেঙে গেছে। বালুভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করছে পাউবো। সোমবার তোলা ছবি। প্রথম আলো
তিস্তার প্রবল স্রোতে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুরহেলান বাঁধ ভেঙে গেছে। বালুভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করছে পাউবো। সোমবার তোলা ছবি। প্রথম আলো

কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এখনো বন্যাকবলিত দুর্গম চরে মানুষের বসতঘরে কোমর ও গলাসমান পানি। এর ফলে তাঁরা ছোট ছোট নৌকায় বসবাস করছে। জেলার সাত উপজেলার নদী তীরের এলাকায় খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। মিলছে না বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি। এতে বানবাসি মানুষকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, তিন সপ্তাহ ধরে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে রৌমারী, রাজীবপুর, চিলমারী, উলিপুর, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলের তিন লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঘর এবং ঘরের আশপাশে এখনো পানি থাকায় মানুষ কোনো কাজ করতে পারছে না। বাড়িতে কোনো খাবার নেই। এ পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত এলাকায় বড় নৌকা দেখলেই ত্রাণের আশায় ছুটছে মানুষ।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রৌমারী উপজেলায় শহররক্ষা বাঁধের ৩০ মিটার ধসে পড়ে উপজেলা পরিষদসহ রৌমারী বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে এ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। একই অবস্থা বিরাজ করছে রাজীবপুর উপজেলায়। বন্যায় উপজেলা পরিষদের ভবনে পানি ওঠায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া চিলমারীতে কাঁচকোল সেতুর কাছে রাস্তার ওপর দিয়ে পানি ঢুকে চিলমারী শহর প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম পৌরসভা ও নাগেশ্বরী পৌরসভার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় লোকজন মহাসড়ক, বাঁধ অথবা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার গত দুই দিনে ২২৫.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করে । প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় জেলা শহরসহ সর্বত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানির তোড়ে রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকার ক্রস বাঁধটি ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বালুর বস্তা ফেলে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা চলছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, ত্রাণের পাশাপাশি চলতি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে জেলার ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫২৫ পরিবারকে ভিজিএফের ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। এতে বন্যাদুর্গত মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে।