গ্রেপ্তারের পর করোনা সংক্রমণের ভান সাহাবুদ্দিন মেডিকেলের ফয়সালের

ফয়সাল আল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
ফয়সাল আল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেসরকারি সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল আল ইসলাম করোনায় সংক্রমিত বলে ভান করেন। তবে তাঁর করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। তাঁকে আজ মঙ্গলবার গুলশান থানায় সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিনের বড় ছেলে ফয়সাল আল ইসলাম। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ফয়সালকে বনানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বনানীর একটি হোটেল থেকে ফয়সালকে গ্রেপ্তারের পর তিনি করোনায় সংক্রমিত বলে ভান করেন। এদিনই তাঁর করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করা হয়। আজ সেই পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। করোনা পরীক্ষার সনদ ছাড়া তাঁকে নিতে চাইছিল না পুলিশ। এখন তাঁকে গুলশান থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হবে।

মামলায় একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক আবুল হাসনাত ও ইনভেনটরি কর্মকর্তা শাহরিজ কবিরকে আজ সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।

করোনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে গত রোববার বিকেলে গুলশানের এই বেসরকারি হাসপাতালটিতে অভিযান চালান র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গতকাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল আল ইসলামহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

গত রোববার অভিযানের সময় আবুল হাসনাত ও শাহরিজ কবিরকে আটক করে র‍্যাব। মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

র‍্যাব জানায়, মামলায় সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে করোনা নেগেটিভ রোগীকে করোনা পজিটিভ সাজিয়ে চিকিৎসা দেওয়া, নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া এবং অনুমোদন না নিয়েই র‍্যাপিড কিট দিয়ে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ করা হয়, হাসপাতালটি রোগীদের কাছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করে আসছিল। এর সঙ্গে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল, সহকারী পরিচালক আবুল হাসনাত ও শাহরিজ কবির জড়িত বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চোরাই পথে র‍্যাপিড টেস্টের কিট এনে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই করোনা রোগীর অ্যান্টিবডি টেস্টের নামে পরীক্ষা না করেই ভুয়া সনদ দিয়ে আসছিল।

র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম গতকাল বলেন, হাসপাতালের নথিপত্রে দেখা যায়, আইসিইউতে করোনা পজিটিভ তিন রোগীর মধ্যে একজন নেগেটিভ রোগীকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আর রাশিয়ার এক নাগরিককে করোনা নেগেটিভ হলেও তাঁকে কেবিনে রেখে করোনার চিকিৎসা দিয়েছে হাসপাতালটি।

র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ২৫ জুন রেহেনা আক্তার নামের এক রোগীর কাছ থেকে এক দিনে ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা আদায় করেছেন এজাহারভুক্ত আসামিরা। এ রকম আরও ১৭ জন রোগীর কাছ থেকে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণপত্র রয়েছে র‍্যাবের হাতে।

সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিনের নামে হাসপাতালের নামকরণ। একসময় তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি ছিলেন।

প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, যা ঘটেছে, এর কিছুই তিনি জানতেন না। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও চিকিৎসায় জড়িত ব্যক্তিদের দায়ী করে তিনি বলেন, এ জন্য তাঁদের সাজা পেতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যেন বন্ধ না করে দেওয়া হয়। এটি বন্ধ করে দেওয়া হলে মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।