খুনসহ একাধিক মামলা নিয়েই দাপিয়েছেন তিন ভাই

শেখ জাকারিয়া, শেখ মিল্টন ও শেখ জাফরিন
শেখ জাকারিয়া, শেখ মিল্টন ও শেখ জাফরিন

তাঁদের বিরুদ্ধে আগেও হত্যা মামলা হয়েছে। মারামারি, খুন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে সব ভাইয়ের নামেই একাধিক মামলা রয়েছে। মামলা মাথায় নিয়েই খুলনার ফুলতলার মশিয়ালী গ্রাম দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিন ভাই শেখ জাকারিয়া, শেখ মিল্টন ও শেখ জাফরিন।

গ্রামবাসী বলছেন, স্থানীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের কিছু নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থেকে তাঁরা গ্রামে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন, যার কারণে পুলিশও সব জেনেশুনে ওই ভাইদেরই সমীহ করে চলত। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ওই তিন ভাইয়ের নির্বিচার গুলিতে ১০ গ্রামবাসী আহত হন, যাঁদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি সাতজন এখনো চিকিৎসাধীন।

২০১৩ সাল থেকে জাকারিয়া, জাফরিন ও মিল্টনের নামে বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজি, মারামারি ও হত্যা মামলা হয়। কেএমপির খানজাহান আলী থানা কমপক্ষে সাতটি মামলা থাকার কথা জানায়। এর মধ্যে জাকারিয়ার বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ চারটি মামলা, জাফরিনের বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ তিনটি মামলা আর শেখ মিল্টনের বিরুদ্ধে আগের দুটি মামলা রয়েছে। এসব মামলার বিচারকাজ চলমান অবস্থায় রয়েছে।

এর মধ্যে ২০১৭ সালে শফিকুল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলাম নামের ২৫ বছরের এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ২ ও ৩ নম্বর আসামি জাকারিয়া ও জাফরিন। আদালতে ওই মামলাটির বিচার চলছে। এ ছাড়া জাকারিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে হওয়া আত্মহত্যায় প্ররোচনার একটি মামলা এখনো চলমান। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মশিয়ালী পূর্বপাড়ার তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ওই তিন ভাইসহ ২২ জনের নামে মামলা করা হয়েছে।

তবে ওই তিন ভাই এসব মামলাকে কখনোই পাত্তা দেননি। মামলা মাথায় নিয়ে দাপটের সঙ্গে চলেছেন তাঁরা।

স্থানীয়রা জানান, বাবা ছিলেন কলেজের গণিতের শিক্ষক। তবে তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট শেখ জাফরিনই কেবল এসএসসির গণ্ডি পেরিয়েছেন। আর জাকারিয়া ওই এলাকার আলীম পাটকলের শ্রমিক নেতা ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, শ্রমিকনেতা হওয়ায় কপাল খুলে যায় জাকারিয়ার। আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েন, থানা কমিটিতে জায়গাও পান। খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আনিসুর রহমান এবং ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন এবং মশিয়ালী ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম দুই ভাই জাকারিয়া ও জাফরিনকে মদদ দিতেন। তাঁদের চাপেই থানা আওয়ামী লীগে পদ পেয়েছিলেন জাকারিয়া। ওই দুই ভাইকে উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেনের গাড়িতে বহুবার দেখেছেন এলাকাবাসী।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে আনিসুজ্জামান ও আকরাম শেখের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের পাওয়া যায়নি। তবে মনিরুল ইসলাম বলেন, দুই মাস ধরে জাকারিয়া-জাফরিনদের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।

মশিয়ালীর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাফরিন সব সময় মারমুখী হয়ে থাকতেন। একে-ওকে মারধর করতেন প্রায়ই। সালিসেও তাঁর হাতে প্রহৃত হয়েছেন এলাকার বয়স্ক লোকজন।

জানতে চাইলে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হাসান বলেন, মশিয়ালী গ্রামটি জামাত-অধ্যুষিত। এ কারণে আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য জাকারিয়াকে থানা কমিটিতে রাখা হয়েছিল। তাঁকে থানা কমিটিতে রাখতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সুপারিশ ছিল।

ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তা বদল

গুলি করে তিনজনকে হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করা হয়েছে। একই আদেশে খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন এসব তাঁদের নিয়মিত কাজের অংশ।