আলোচিত সাংসদ সেলিনা ইসলামকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

মানব ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগে কুয়েতে কারাবন্দী সাংসদ মো. শহিদ ইসলামের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ সেলিনা ইসলাম ও তাঁর বোন জেসমিন প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দীন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে জানান, সেলিনা ইসলাম ও জেসমিন প্রধানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানাধীন অভিযোগ হচ্ছে, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গ্রাহককে ঋণ বরাদ্দ করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ মানি লন্ডারিং করে বিদেশে পাচার। শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন।

১২ জুলাই তলবি নোটিশের মাধ্যমে সেলিনা ইসলাম ও জেসমিন প্রধানকে দুদকে হাজির হতে বলেছিলেন অভিযোগ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন। আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংসদ সেলিনা ইসলাম অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, 'দুদক আসতে বলেছিল। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি। গণমাধ্যমে যেগুলো আসছে, সেগুলোর কোনো সত্যতা নেই।'

সেলিনা ইসলাম বলেন, সাংসদ শহিদ ইসলাম দেশে রেমিট্যান্সে বড় অবদান রেখেছেন। অনেক শ্রমিক বিদেশে কাজ করছেন। সেগুলো গণমাধ্যমে আসছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে সেলিনা ইসলাম বলেন, তাঁর স্বামী সাংসদ শহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আইনের মাধ্যমে তাঁর স্বামী মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসবেন।

সাংসদ শহিদ কুয়েতে আটক হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়, শুধু টাকার জোরে সস্ত্রীক সাংসদ হয়েছেন শহিদ। ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে প্রথমে নিজে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ হন। পরে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও একইভাবে সংরক্ষিত আসনে সাংসদ বানান। কুয়েতে আটক হওয়ার পর প্রকাশ হয়, এই টাকার উৎস ভিসা বাণিজ্য ও মানব পাচার।

২০১৮ সালে শহিদ ইসলামের নির্বাচনী হলফনামায় দেখা যায়, ওই সময়েই তিনি ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম সোনাদানাসহ প্রায় শত কোটি টাকার অর্থসম্পদের মালিক। এর মধ্যে কেবল ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত থেকেই শহিদের বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ১৭৪ টাকা। স্ত্রী সেলিনা ব্যাংকের আমানত থেকে বছরে সুদ পান ১ কোটি ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৬ টাকা।

হলফনামায় শহিদ উল্লেখ করেছেন, তাঁর নামে ৩৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ৫২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার অর্থসম্পদ আছে। এর বাইরে মেয়ে ওয়াফা ইসলামের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে, যার মূল্য ১ কোটি ২৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

সাংসদ দম্পতির ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, প্রদর্শিত এই অর্থসম্পদের বাইরেও শহিদ ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলামের বিপুল অর্থসম্পদ আছে দেশ-বিদেশে।