'বন্যার পানি গরম করে খাচ্ছি'

বন্যায় নলকূপ ডুবে গেছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট। তাই গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসি গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল পরিবার নিয়ে কলার ভেলায় চেপে পানি সংগ্রহ করতে উঁচু জায়গায় যাচ্ছেন। ২২ জুলাই। প্রথম আলো
বন্যায় নলকূপ ডুবে গেছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট। তাই গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসি গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল পরিবার নিয়ে কলার ভেলায় চেপে পানি সংগ্রহ করতে উঁচু জায়গায় যাচ্ছেন। ২২ জুলাই। প্রথম আলো

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসি গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল (৫৫)। বন্যায় তিনটি ঘর ডুবে গেছে। পানিতে নষ্ট হয়েছে আসবাবপত্র। কিন্তু বাঁধে কিংবা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেননি। বাড়িতেই অবস্থান করছেন। ঘরবাড়ির পাশাপাশি বন্যার পানিতে ১৫ দিন ধরে ডুবে আছে একমাত্র অগভীর নলকূপটি। এ কারণে বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন। বন্যার পানি দিয়ে থালা–পাতিল পরিষ্কার করছেন। খাবার পানি সংগ্রহ করছেন দূর থেকে।

আবদুল জলিল বললেন, ‘চারদিকে এত পানি, তবু খাওয়ার পানি নেই। তাই কলার ভেলায় করে উঁচু জায়গায় নলকূপের পানি আনতে যাচ্ছি।’

আবদুল জলিলের মতো বালাসি গ্রামের অনেকেই বিশুদ্ধ পানির সংকটের কথা বললেন।

গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যাকবলিত গাইবান্ধার চারটি উপজেলার প্রায় ১ হাজার ২০০টি অগভীর নলকূপ পানিতে ডুবে গেছে। এ এলাকাগুলোয় বিশুদ্ধ পানি সংকট চলছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেক এলাকায় পেটের পীড়া ও আমাশয় দেখা দিয়েছে।

বালাসি গ্রামের গৃহিণী জমিলা খাতুন (৫০) বলেন, ‘বন্যায় আমাদের দুটি ঘর ডুবে গেছে। আমরা বাড়িতেই আছি। কোনোখানে যাইনি।’ তিনি বলেন, ‘ধারদেনা করে খাবার কিনছি। খাবার সংগ্রহ করছি। কিন্তু পানির সমস্যায় ভুগছি। বন্যার পানি দিয়ে সব করা যায়, কিন্তু খাওয়া যায় না। তাই বন্যার পানি গরম করে খাচ্ছি।’ একই গ্রামের আমিনা বেগম (৪৫) বলেন, ‘আমাদের আশপাশের বাড়ি মিলে একটি নলকূপ ছিল। সেটি পানিতে ডুবে আছে। সেটির পানি খেতে পারছি না। তাই কখনো বন্যার পানি ফুটিয়ে খাচ্ছি কখনো নৌকা নিয়ে উঁচু জায়গা থেকে পানি আনছি।’ একই গ্রামের লাইলী বেগম (৩৫) বলেন, ‘আমাদের আঙিনায় একটি নলকূপ ছিল। সেটি এখন পানির নিচে। ফলে বিশুদ্ধ পানির সমস্যায় ভুগছি।’ তিনি বলেন, ‘না খেয়ে এক দিন থাকা যায়, কিন্তু পানি না খেলে চলে না। আমরা দূর থেকে পানি আনি খাচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে আজ বুধবার সকালে গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজওয়ান হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, আজ পর্যন্ত চারটি উপজেলায় ১০২টি নলকূপ বসানো হয়েছে। এগুলো বাঁধ ও উঁচু জায়গায় বসানো হয়। আরও নলকূপ বসানো হবে। এ ছাড়া ৬৫০টি নলকূপ মেরামত ও উঁচুকরণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, পানি সমস্যায় ভুগছেন বিশেষ করে চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষ। তাদের অনেকের হাতে ও পায়ে ঘা–জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এ বি এম আবু হানিফ প্রথম আলোকে জানান, বন্যাপরবর্তী রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণে জেলার দুর্গত এলাকায় ৬১টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। কোনো সমস্যা হবে না।

বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আরও ১ সেন্টিমিটার কমেছে এবং ঘাঘট নদের পানি ২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে আজ সকাল ছয়টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়িঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদের পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আজ সকাল ছয়টায় করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমার নিচে থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় করতোয়ার পানি ৩৫ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার পানি ৩০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

আজ সকালে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, জেলার সব কটি নদীর পানি কমে যাচ্ছে। তবে দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে পানি সামান্য করে বাড়ছে। কয়েক দিনের মধ্যে বন্যার উন্নতি হবে।