আগামী দুদিন আরও বৃষ্টি ও ঢল নামবে সুনামগঞ্জে

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছ। এর ফলে জেলার সব কটি উপজেলা ও পৌরসভা আবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। জেলা শহরের সঙ্গে চারটি উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার বেলা তিনটায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলোঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। জেলার যাদুকাঁটা নদীর পানি ৬১টি সেন্টিমিটার ও পুরোনো সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১২০ মিলিমিটার। একই সময়ে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১১৭ মিলিমিটার। উজানে বৃষ্টি হওয়ায় ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে। এতে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। মানুষজন আবার ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রে। কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আছে প্রায় এক মাস ধরে।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খসরুল আলম জানান, হাওর এলাকার মানুষ করোনার সঙ্গে দুদফা বন্যায় এমনিতেই বিপর্যস্ত। মানুষের বাড়িঘর থেকে পানি নামার আগেই এখন আবার তৃতীয় দফা বন্যার দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে লোকজন।

দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম জানান, তাঁর ইউনিয়নের সব কটি গ্রামই বন্যাকবলিত। বেশির ভাগ রাস্তাঘাটই প্লাবিত। মানুষজন পানিবন্দী অবস্থায় আছে। বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে আছেন মানুষজন।

এই উপজেলার জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আবু তাহের বলেন, ‘এক মাস ধইরা বইন্যা। অত লাম্বা পানি ত আর দেখছি না। বইন্যা অয় আবার চাইর-পাঁচ দিন পড়ে যায়গি। ইবার দেখি একটার পর একটা পানি আছেই।’

স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, তাহিরপুর, দেয়ারাবাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার গ্রামীণ সড়কের বেশির ভাগই এখন প্লাবিত। মানুষের ঘরবাড়িতে পানি। ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় তিন দিন ধরে ছাতকের মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। একইভাবে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-ছাতক, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়ক আবার প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে এসব উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে সুনামগঞ্জে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয় গত ২৫ জুন। এরপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আবার দ্বিতীয় দফা বন্যার শুরু হয় ১০ জুলাই থেকে। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগেই আবার শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে বর্তমানে ২৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার ৩৯৫টি পরিবার রয়েছে। জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৭২৯টি পরিবার। এ পর্যন্ত বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ৮৭০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৫১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ৩ হাজার ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ২ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ২ লাখ টাকার গো-খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী প্রীতম পাল বলেছেন, আবহাওয়া সতর্কীকরণ বার্তা অনুযায়ী আগামী দুদিন সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি থাকবে। একই সময় উজান থেকে ঢল নামবে। তাই এই দুদিন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই, বরং আরও অবনতি হতে পারে।