বেসরকারি হাসপাতালগুলো যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়: হাইকোর্ট

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

হাইকোর্ট বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের প্রভাব বিস্তারের চর্চা থেকেও বিরত রাখতে হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে করা পৃথক রিটের শুনানিতে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এমন অভিমত দেন।

করোনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযানের পর বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মালিক সমিতির নেতাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে প্রকাশিত খবরের প্রসঙ্গ শুনানি এলে আদালত ওই মন্তব্য করেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে এ বিষয়ে দেখতে বলেন আদালত। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো যাতে যথাযথভাবে চলে, সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। আর যেসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আছে, ইতিমধ্যে সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে করা পৃথক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ জুলাই হাইকোর্ট চিকিৎসা না দিয়ে রোগী ফেরত নিয়ে গণমাধ্যমে আসা অভিযোগগুলো তদন্ত করে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ২২ জুলাই শুনানির দিন রেখেছিলেন। এ অনুসারে আজ বিষয়টি আদালতে ওঠে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। তদন্ত কার্যক্রম চলমান জানিয়ে তা শেষ হতে কিছুটা সময় প্রদানের আরজি রয়েছে প্রতিবেদনে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে সেদিন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

এর আগে শুনানিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে গণমাধ্যমে ব্রিফিংয়ের প্রসঙ্গ তোলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক হিসেবে শাস্তি দিচ্ছেন। তাই বিচার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি বলতে পারেন না। আদালত বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের কিছু কিছু ম্যাজিস্ট্রেটকে তাঁদের কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে দেখা যায়। অথচ তাঁদের দায়িত্ব হচ্ছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার ও তুষার কান্তি রায় এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তৌফিক সাজাওয়ার।

পৃথক রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান, অনীক আর হক, মাহফুজুর রহমান মিলন, এ এম জামিউল হক ও এ কে এম এহসানুর রহমান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের ভাষ্য, ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের জন্য এবং জেলার জন্য যথাক্রমে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) এবং সিভিল সার্জনকে সভাপতি করে চার সদস্যের মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা তদন্তকাজ শুরু করেছেন। তদন্ত শেষ না হওয়ায় এখনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষ করে অবিলম্বে অধিদপ্তর বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানানো হয়। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাতে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলা সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ সহজেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানাতে পারে, সে জন্য অভিযোগ গ্রহণের সুবিধার্থে পৃথক একটি ইমেইল আইডি খোলা হয়েছে।