চাল-ডাল নিয়ে নয়, লাশ হয়ে ফিরলেন তিনি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বদি আহমদ চাল-ডাল নিয়ে বাড়ি ফিরলে চুলায় আগুন দেওয়ার কথা ছিল কামরুন নাহারের। কিন্তু চাল-ডাল নয়, এল স্বামীর লাশ। লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন কামরুন নাহার। বিলাপ করে বলছিলেন, ‘সবজি বিক্রি করে চাল-ডাল নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা স্বামীর। আল্লাহ আমি একি দেখছি, কী অপরাধ করেছি, কেন আমার স্বামীর লাশ দেখতে হলো।’

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের হারবাং স্টেশন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুটো গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে বদি আহমদসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হাইওয়ে পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটো জব্দ করেছে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের সন্দ্বীপপাড়া এলাকার আল আমিন (৪৮), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের বৃন্দাবনখিল এলাকার বদি আহমদ (৬৫), কোনাখালী ইউনিয়নের মধ্যম কোনাখালী গ্রামের সিরাজ আহমদ (৬০), একই এলাকার হাসান আলী পাড়ার মো. বাবুল (৪০), লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া গ্রামের মো. মিনহাজ (২৫) এবং একই উপজেলার পদুয়া এলাকার মো. শহিদ (১৮)।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বদি আহমদ বাড়ির পাশে নিজের মাত্র ১৫ শতক জমিতে সবজি চাষ করেন। সেখান থেকে সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। গতকাল খাঁচিভর্তি সবজি নিয়ে বিক্রি করতে যাওয়ার পথে ওঠেন লেগুনায়। কিছু দূর যেতেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয় লেগুনটি। এতে প্রাণ হারান তিনি।

বদি আহমদ দুই ছেলে ও তিন মেয়ের বাবা। এক ছেলে মালয়েশিয়াপ্রবাসী, আরেক ছেলে চাকরিসূত্রে টেকনাফ থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে ছেলেদের কাছ থেকে আলাদা থাকতেন বদি আহমদ ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার। নিহত অন্যদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় লোকজন ও হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে হারবাং স্টেশন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চট্টগ্রামমুখী একটি কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে চকরিয়ামুখী একটি লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুটো গাড়িই মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে লেগুনার আট থেকে ১০ জন যাত্রী আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে ছয়জনের মৃত্যু হয়। একজনের পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদুল হক বলেন, নিহত ছয়জনের মরদেহ হাইওয়ে পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে। একজনকে গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কাভার্ড ভ্যান ও লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পর দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনায় নিহত ছয়জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।