সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ভ্যানচালকের উদ্যোগ
সড়কটির দুই পাশে জঙ্গল আর জঙ্গল। মোড়গুলোতে বিপরীত দিকের কিছু দেখার উপায় নেই। তাই মোড়গুলোতে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুই পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ। এতে জীবনহানি থেকে শুরু করে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকে। প্রতি মাসে সড়কটিতে দু–তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে ওই পথে চলাচলকারী ভ্যানচালক আকিমুল ইসলামকে। উদ্যোগ নেন সমাধানের।
ঝিনাইদহের পাগলাকানাই থেকে জিয়ানগর হয়ে কোটচাঁদপুর মেইন বাসস্ট্যান্ডে মিশেছে একটি সড়ক। এই সড়কের কোটচাঁদপুর অংশের তালসারের ঘাঘা থেকে সদর উপজেলার হাজিডাঙ্গা পর্যন্ত দুই পাশে প্রচুর জঙ্গল তৈরি হয়।
স্থানীয়রা জানান, সড়কটির মোড়গুলোতে জঙ্গল থাকায় সামনের কিছু দেখা যেত না। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছিল। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঘটেছে দুটি দুর্ঘটনা। ১৯ জুলাই ওই সড়কের ঘাঘা গ্রামের এক মোড়ে নছিমনের সঙ্গে লাটাগাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় গাড়ির চালক গুরুতর আহত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন। গতকাল ২৩ জুলাই এই সড়কের কুশনা এলাকায় নছিমনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি মাসেই দুই থেকে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে।
ভ্যানচালক আকিমুল ইসলামকে বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে। তিনি বলেন, কীভাবে এর সমাধান হবে, তিনি সেই পরিকল্পনা করেন। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও মোবাইলে চারটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কাছে সড়কের জঙ্গল পরিষ্কারে কর্মী দাবি করেন। এরপর আলোচনা করে আজ শুক্রবার তাঁরা সড়কটির দুই ধারে থাকা জঙ্গল পরিষ্কার করেছেন।
আকিমুল ইসলামের উদ্যোগে অনির্বাণ সেচ্ছাসেবী সংগঠন, ঘাঘা প্রভাতী সংঘ, তালসার একতা সেবা সংঘ ও স্বপ্নছোঁয়া সামাজিক সংগঠন নামে চারটি সংগঠন একত্র হয়। ঘাঘা প্রভাতী সংঘের সভাপতি পারভেজ হাসান জানান, ৩০ সদস্য আজ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘাঘা থেকে হাজিডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটারের বেশি সড়কের দুই ধারের জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করেন। অনেক স্থানে বাঁশঝাড়ও তাঁদের কাটতে হয়েছে, যা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিশ্রমের। এই কাজ করতে গিয়ে একজন আহতও হয়েছেন। তারপরও জনসাধারণের কথা চিন্তা করে তাঁরা কাজটি শেষ করেছেন।
স্বপ্নছোঁয়া সামাজিক সংগঠনের সভাপতি ও তালসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তবিবুর রহমান জানান, সড়কটির দুই পাশে জঙ্গলের কারণে প্রায়ই নানা দুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ বিষয়টি নিয়ে ভাবেননি, ভেবেছেন একজন ভ্যানচালক। যা তাঁদের মুগ্ধ করে এবং আকিমুলের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁরা এই জঙ্গল পরিষ্কার করেন। তিনি জানান, এ–জাতীয় কাজে উৎসাহ দিতে ইতিপূর্বে তাঁর বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে আকিমুল ইসলামকে সম্মাননা জানানো হয়।
এর আগেও এই সড়কে আকিমুল সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড বসিয়েছিলেন, যা এখনো পথচারীদের চোখে পড়ে।
আকিমুল ইসলাম ওরফে সাজু ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার গ্রামের আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়ার ছেলে। অভাব–অনটনের কারণে পড়ালেখা বেশি দূর এগোয়নি তাঁর। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই এক দোকানের কর্মচারীর কাজে যেতে হয়। এরপর একসময় সেখান থেকে ফিরে শুরু করেন ভ্যান চালানো। ১৩ বছর ধরে তিনি ভ্যান চালাচ্ছেন। মা, বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। কষ্ট করেই চলে তাঁদের সংসার। তারপরও তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ভোলেননি।
ওই সড়কে চলাচলকারী একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় কর্মকর্তা আবদুল হাকিম বলেন, তিনি আজ ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় জঙ্গল পরিষ্কার করতে দেখেছেন। এই জঙ্গলের কারণে সড়কটিতে চলাচল করতে ভয় হতো, এখন নির্ভয়ে চলাচল করা যাবে।
ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার বলেন, সড়কের ধারের এই জঙ্গল কাটার জন্য তাঁদের নিজস্ব কোনো লোক নেই। তবে সড়ক মেরামতের বরাদ্দ থেকে শ্রমিক নিয়োগ করে অনেক স্থানে জঙ্গল পরিষ্কার করে থাকেন। এবারও আগস্ট মাসের দিকে মেরামতের বরাদ্দ পেলে ওই সড়কের জঙ্গল পরিষ্কারের ব্যবস্থা করবেন।