ধলাই নদ থেকে অবৈধভাবে বালু-পাথর তুলছেন ব্যবসায়ীরা

নৌকার সঙ্গে বাঁশের ভেলার মধ্যে স্থাপন করা খননযন্ত্র দিয়ে তোলা হচ্ছিল বালু ও ছোট পাথর। টাস্কফোর্সের অভিযানে এসব যন্ত্র ধ্বংস করা হয়। ২৭ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
নৌকার সঙ্গে বাঁশের ভেলার মধ্যে স্থাপন করা খননযন্ত্র দিয়ে তোলা হচ্ছিল বালু ও ছোট পাথর। টাস্কফোর্সের অভিযানে এসব যন্ত্র ধ্বংস করা হয়। ২৭ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

জাফলংয়ে সীমান্ত নদী ডাউকীর পর এবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদেও অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে। ধলাই নদে পাহাড়ি ঢল নামার সুবাদে একশ্রেণির বালুর কারবারিরা ভাসমান পদ্ধতিতে নৌযানে পাথর উত্তোলনযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু-পাথর তুলছে। তবে এ অপতৎপরতা বন্ধে টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একদফা অভিযানে ছয় লাখ টাকার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এর আগে ১৬ জুলাই আরেকটি অভিযানে তিন লাখ টাকার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ১১ দিনের মাথায় সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নৌপথে টানা চার ঘণ্টার টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় অভিযান হয়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্যের নেতৃত্বে অভিযানে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুলসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সীমান্তের কালাসাদেক ক্যাম্পের সদস্যরা অংশ নেন।
পাহাড়ি ঢলে টইটুম্বর নদীর পানিতে যন্ত্র দিয়ে বালু ও পাথর আহরণের অবৈধ এই তৎপরতাকে খেদোক্তি করে ‘মধু’ বলা হয়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জানায়, ধলাই নদের ভোলাগঞ্জ এলাকায় রেলওয়ের ঐতিহ্যবাহী রজ্জুপথের (রোপওয়ে) সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছিল। টাস্কফোর্সের অভিযানে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী ১০ জন কারবারিকে আটক করা হয়। পরে ইউএনও পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁদের ছয় লাখ টাকা অর্থদণ্ড করেন। এ সময় ১০টি নৌকার সঙ্গে বাঁশের ভেলার মধ্যে স্থাপন করা খননযন্ত্র ধ্বংস করা হয়। অর্থদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ১৫০ ঘনফুট ‘চিপপাথর’ জব্দ করে তাৎক্ষণিক উন্মুক্ত নিলাম ডাকের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।

পাহাড়ি ঢল থেকে ধলাই নদে বড় বড় নৌকায় অবৈধভাবে তোলা হয় বালু ও পাথর। ২৭ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
পাহাড়ি ঢল থেকে ধলাই নদে বড় বড় নৌকায় অবৈধভাবে তোলা হয় বালু ও পাথর। ২৭ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

রজ্জুপথের বাংকার থেকে শুরু করে ধলাই নদের তীরের লিলাইবাজার এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। একই এলাকায় ১৬ জুলাই কোম্পানীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুপমা দাসের নেতৃত্বে টাস্কফোর্সের আরেকটি অভিযান হয়েছিল। ওই অভিযানে তিনটি যন্ত্র ধ্বংস করে পাঁচজন বালু কারবারিকে সাড়ে তিন লাখ টাকার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
অবৈধ এই তৎপরতার সঙ্গে পাথর কোয়ারি–সংশ্লিষ্ট পাথর ব্যবসায়ীরাও জড়িত বলে জানিয়েছেন ধলাই নদের তীরের বাসিন্দারা। তাঁদের ভাষ্য, জাফলংয়ের ডাউকী নদীতে অবৈধ এই তৎপরতায় প্রশাসন বাধা দিলে ধলাই নদে বাড়ে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, বর্ষাকালে ঢলের পানিতে অবৈধভাবে বালু-পাথর আহরণকারীদের মধ্যে যোগসাজশও রয়েছে। এটি একটি চক্র। এ জন্য এলাকাবাসী প্রশাসনের সার্বক্ষণিক নজরদারির দাবি জানান।

ধলাই নদে অবৈধভাবে বালু–পাথর তোলার হিড়িক। ২৭ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
ধলাই নদে অবৈধভাবে বালু–পাথর তোলার হিড়িক। ২৭ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

ধলাই নদে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত টাস্কফোর্সের অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও সুমন আচার্য। অভিযান শেষে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভোলাগঞ্জে রজ্জুপথের সংরক্ষিত এলাকার পাশেই সীমান্তের শূন্যরেখার নিকট সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র। সেখানে এবারের পাহাড়ি ঢলে নতুন পাথরের স্তূপ জমা হয়েছে। বালু তোলার অবৈধ তৎপরতায় রেলওয়ের সংরক্ষিত এলাকা ও সাদা পাথর এলাকায় পাথর লুটপাটের শঙ্কা থাকায় প্রথম অভিযানের এক সপ্তাহ পর দ্বিতীয় দফায় টাস্কফোর্সের এ অভিযান হয়েছে। টাস্কফোর্সের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।