ফেসবুক লাইভে এসে মেয়েটি বলল, প্লিজ কেউ আম্মুকে বাঁচান

এস এম হাক্কানি খসরু। সংগৃহীত
এস এম হাক্কানি খসরু। সংগৃহীত

রাজধানীর একটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের এক শিক্ষার্থী ফেসবুক লাইভে এসে বলছে, ‘প্লিজ, কেউ আমার আম্মুকে বাঁচান, প্লিজ। একে পুলিশ ধরে না। আমরা পুলিশকে খবর দিছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। আমার বাবা, আমার আম্মুকে খুব মারতেছে। কেউ বাঁচাচ্ছে না। কেউ বাঁচান, প্লিজ।’

মায়ের সামনে ভয়ার্ত ওই কিশোরীর এই আর্তনাদ ফেসবুকে ভাইরাল। ঘটনাটি পুলিশের নজরেও এসেছে। মেয়েটি যখন মাকে বাঁচাতে আকুতি জানাচ্ছে, তখন লোকটির ঘরের ভেতরেই ছিলেন।

হাজারীবাগ থানার পুলিশ বলছে, ফেসবুক লাইভে আসা কিশোরীর ভিডিওটি দেখে ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা সেখানে যান। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কিশোরীর মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. হাসিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ধানমন্ডির মধুবাজার এলাকায় মাকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে ফেসবুক লাইভে আসা কিশোরীর ভিডিওটি আমরা গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় দেখি। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু পুলিশকে তারা সহযোগিতা করছিল না। তবে আজ সন্ধ্যার সময় একজন নির্বাহী হাকিমের উপস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আবার ওই বাসায় যান। পরে ওই কিশোরী এবং তাঁর মায়ের সঙ্গে পুলিশের কথা হয়েছে। পুলিশের কাছে একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যে লোকের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।

ফেসবুক লাইভে যাঁর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ, তাঁর নাম এস এম হাক্কানি খসরু। খসরু ওই কলেজছাত্রীর বাবা। মেয়েটির মায়ের নাম সাহেদা বেগম। খসরুর বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা আছে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।

হাজারীবাগ থানার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, খসরুর সঙ্গে সাহেদার ছাড়াছাড়ি হয়েছে দুই বছর আগে। এই দম্পতির দুই মেয়ে।

ফেসবুক লাইভে এসে মেয়েটি বলেছে, ‘আমরা পুলিশকে খবর দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। আমার বাবা আম্মুকে খুব মারতেছে। কেউ বাঁচাচ্ছে না। কেউ বাঁচান, প্লিজ। এই লোকটাকে কেউ ধরে না। এর নাম হাক্কানি খসরু। কেউ ধরে না। পুলিশও ধরে না। এত নির্যাতন করে আম্মুর ওপর কিন্তু কেউ ধরে না। দুপুরে দুবার মাকে ফাঁস লাগিয়ে মারতে গেছে। এই লোক খুব টর্চার করতেছে। প্লিজ, কেউ আম্মুকে বাঁচান।’

এই ফেসবুক লাইভে মেয়েটির মা সাহেদা বেগম বলেন, ‘সকালে ভয়ংকর অপরাধীর মতো নির্যাতন করেছে। সব ম্যানেজ করে বেড়ায়। সাহেদের থেকে একশগুন বেশি অপরাধী। শুধু মিথ্যা কথা বলে। অকল্পনীয় নির্যাতন করে। অনেক বাজে কাজও করে। নেশা করে। ড্রাগ এডিক্টেড। সারা জীবন নির্যাতন করে। হাক্কানি খসরু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডার। হাক্কানি খসরু, তাঁর অকল্পনীয় পাওয়ার। পুলিশ আমাদের কথা শোনে না। মাদক ও নারী ব্যবসা করে। আমাকে বেঁচে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে। এই বাসা, দেহ ব্যবসার কাজে ব্যবহার করত। ২০১৭ সালে ধরা পড়ে। তারপর তাকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিছি। কিন্তু তাও আমাদের ওপর নির্যাতন করে। সুযোগ বুঝে বাসায় ঢুকে আমাদের ওপর নির্যাতন করে।’

মেয়েটি বলে, ‘সারাক্ষণ অবিচার করে। আর শুধু মিথ্যা কথা বলে। অকল্পনীয় নির্যাতন করে আম্মুর ওপর।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি আমার নজরে এসেছে। লোকটির বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন করাসহ নানা অভিযোগ করেছে ওই মেয়েটি ও তাঁর মা। আইন অনুযায়ী, ফেসবুক লাইভে এসে মেয়েটি যেসব অভিযোগ তুলে ধরেছে, সেগুলো দণ্ডনীয় অপরাধ। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত, যত দ্রুত সম্ভব ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। লোকটি যদি দোষী হয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে আইনের আওতায় আনা উচিত।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।’