দুই ভাইয়ের পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেপ্তার দাবি

বরকত ও রুবেল
বরকত ও রুবেল

ফরিদপুরের দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলের সহযোগী ও তাঁদের পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। একই সঙ্গে তাঁদের দখল করা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে বলেছেন তাঁরা। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, রুবেল-বরকতের কিছু সহযোগী এখনো এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তাঁরা।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেছেন, ফরিদপুরে আর কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না। কারও বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পেলেই তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল মঙ্গলবার ‘সন্ত্রাসীদের হাতে রাজনীতির “চেরাগ”’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর শহরের বাসিন্দারা প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে শুরু করেছেন। ফোন করে প্রথম আলোর কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই, যাঁদের প্রায় সবাই সরকারদলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রুবেল-বরকতের জন্ম হঠাৎ করে হয়নি। আশ্রয়-মদদদাতাদের কারণে তাঁদের উত্থান হয়েছে। তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে, যাতে ক্ষমতা পেলেই কেউ যা খুশি তা-ই করতে না পারে।

সব দুর্নীতির পেছনে সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তাঁর ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা উল্লেখ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রুবেল-বরকতকে তাঁরা ব্যবহার করেছেন। এখন সবার সম্পদের হিসাব নিলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

গ্রেপ্তার সন্ত্রাসীরা তাঁদের অনেক সহযোগী ও দখলদারদের নাম বলেছেন। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান খানের দাবি, তাঁদেরও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের দুর্নীতির সঙ্গে সাবেক মন্ত্রীর ভাই ও তাঁর অনুসারীরা জড়িত বলে অভিযোগ আছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি বরকতের শ্বশুর ও তাঁর শ্যালকদের চাঁদাবাজি ও জমি দখলের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।

এখন অনেকে ভালো হওয়ার জন্য কেউ কেউ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, এ কথা উল্লেখ করে ফরিদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ বোস বলেন, একসময় এঁরাও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ছিলেন। এই সুবিধাভোগীরাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি নূর মোহাম্মদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা শওকত আলী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনির হোসেনকে কুপিয়ে আহত করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা প্রথম আলোর সাংবাদিক পান্না বালা এবং ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. হালিমকে লাঞ্ছিত করতে উসকানি দেন।

সব সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভী মাসুদ।

খবরটি প্রকাশের পর প্রশ্ন উঠেছে, অবৈধভাবে অর্জিত এই সম্পদের কী হবে? ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, দখলদারদের অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে যার যার সম্পত্তি, তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

রাজনীতিবিদদের কাজ জনগণের জন্য রাজনীতি করা, সন্ত্রাসী পালন নয়—টেলিফোনে এমন মন্তব্য করেন ফরিদপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহিদুজ্জামান খান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ফরিদপুরের রাজনীতি থেকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অবসান চান এলাকাবাসী।