পল্লবী থানায় বিস্ফোরিত বোমার লক্ষ্য কে

জঙ্গি হামলার শঙ্কা নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সতর্কবার্তার ১০ দিনের মাথায় গতকাল রাজধানীর পল্লবী থানার ভেতরে বোমা বিস্ফোরণে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই বোমার দায় স্বীকার করেছে বলে বিশ্বে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর অনলাইন তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন জানান, সন্দেহজনক তিন ভাড়াটে খুনিকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের কাছে ওজন মাপার একটি যন্ত্র পাওয়া যায়। সেই যন্ত্রের ভেতরে বোমা রাখা ছিল। সেটা থানায় এনে নাড়াচাড়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনই পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের অনুসারী। শাহাদতের নির্দেশে তাঁরা এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে হত্যার ছক কষেন। পুলিশ সে খবর আগে জানতে পেরে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন রফিকুল ইসলাম (৪০), শহিদুল ইসলাম (২৩) ও মোশাররফ হোসেন (২৬)। তাঁদের তিনজনকে থানা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে কোন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সে বিষয়েও কিছু বলেননি পুলিশ কর্মকর্তারা।

এ ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন পরিদর্শক (অভিযান) ইমরানুল ইসলাম, উপপরিদর্শক সজীব খান, শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শক রুমি তাবরেজ হায়দার, অঙ্কুশ কুমার দাশ এবং পরিদর্শকের ব্যক্তিগত কর্মী রিয়াজুল ইসলাম। বোমার আঘাতে রিয়াজুলের বাঁ হাতের কবজি উড়ে গেছে, অঙ্কুশের চোখে আঘাত লেগেছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, রিয়াজুল ও অঙ্কুশের অবস্থা গুরুতর।

পল্লবী থানার পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে পল্লবী থানার পুলিশ কালশী কবরস্থানে অভিযান চালিয়ে তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, চারটি গুলি ও ওজন মাপার একটি যন্ত্র পাওয়া যায়। পরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের থানায় আনা হয়। সন্ত্রাসীদের কাছে ওজন মাপার যন্ত্র থাকা নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশের বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ইউনিটের সদস্যরা থানার পরিদর্শক ইমরানুলের কক্ষে গিয়ে সেটি পরীক্ষা করেন। কিন্তু কিছু বুঝতে পারছিলেন না। আরও পরীক্ষার জন্য কিছু যন্ত্রপাতির দরকার ছিল। সে জন্য ইউনিটের অন্য সদস্যদের খবর দেওয়া হয়। তাঁরা পৌঁছার আগেই থানার ভেতর বিস্ফোরণ ঘটে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ সদস্য জানান, পুলিশের একজন কর্মকর্তা এসে এটা বোমা নয় বলে জানান। তারপরও নিশ্চিত হতে অন্য একটি দলকে ডাকা হয়। সকাল ছয়টার দিকে কক্ষে থাকা এক পুলিশ সদস্য সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গেলে বিস্ফোরিত হয়।

পল্লবী থানার আরেকজন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিন সন্ত্রাসীই বলেছিলেন, ওজন মাপার যন্ত্রে বোমা আছে। সেটা নিশ্চিত হতেই বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলকে ডাকা হয়েছিল।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওজন মাপার যন্ত্রে চারটি বোমা বসানো ছিল। এর একটি বিস্ফোরিত হয়। বোমা উদ্ধারকারী দল দুটি বোমা নিষ্ক্রিয় করে। আর একটি অকেজো ছিল।

গতকাল দুপুরে পল্লবী থানায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর বেলা আড়াইটা পর্যন্ত থানার সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। দুপুরের পর তিন সন্ত্রাসীকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

>থানার ভেতরে বিস্ফোরণ
পুলিশসহ পাঁচজন আহত
আইএসের দায় স্বীকার
বোমাটি ওজন মাপার যন্ত্রের ভেতরে পেতে রাখা ছিল
নাড়াচাড়ার সময় বিস্ফোরিত হয়


ঘটনাস্থলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ধার করা বোমাসদৃশ বস্তু, যা আসলেই বিস্ফোরক। এগুলো কোথা থেকে কেন আনা হলো, তার তদন্ত চলছে। গ্রেপ্তার তিনজনের পেছনে আর কারা ছিল, তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে পুলিশ।

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার হুমকির সঙ্গে এ ঘটনার কোনো যোগসূত্র আছে কি না, জানতে চাইলে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জঙ্গি নন, কোনো অপরাধী চক্রের সদস্য। তাঁরা একটি অপরাধের পরিকল্পনা করছিলেন। সেটা কাউকে খুন করা, সম্পত্তি দখল বা ডাকাতি হতে পারে।

বিস্ফোরণের পর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল সন্ত্রাসীদের। এই তথ্যের ভিত্তিতেই তৎপর ছিল পুলিশ। গ্রেপ্তার তিনজন শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের সহযোগী বলে জানা গেছে।

ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপকমিশনার আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার করা বোমাগুলো এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস। এর মধ্যে কোনো সার্কিট নেই। এতে বিস্ফোরণে কাছাকাছি ক্ষয়ক্ষতি হয়, সেটাও বড় কিছু নয়।

সম্প্রতি দেশজুড়ে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ১৯ জুলাই পুলিশের সব ইউনিটে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। সেখানে পুলিশকে টার্গেট করে বা পুলিশ স্থাপনায় হামলা হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।

সেই সতর্কবার্তা জারির পর গত শুক্রবার পল্টনে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। রহস্যজনক সেই বিস্ফোরণের রেশ না কাটতেই পরদিন একই এলাকা থেকে একটি বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধার করে পুলিশ। এর চার দিনের মাথায় পল্লবী থানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল।