আমার স্বামীর মহানুভবতা আমার ঋণ

করোনাভাইরাসে পাল্টে গেছে জীবনের বাস্তবতা। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। করোনায় জীবন নিয়ে লিখছেন অনেকেই। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর সিরিজ লিখছেন এই লেখক, কবি। আজ পড়ুন চতুর্থ পর্ব।

আমার স্বামীর মহানুভবতা এক মাইলফলক হয়ে আমাকে আরও একবার ঋণী করে দিলেন তাঁর কাছে।

গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি—তিন মাস আমার মা-বাবার অসুস্থতার সময় আমাকে টানা তিন মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে তাঁদের কাছে। এই সময় স্বামী আমাকে যে পরিমাণ সাপোর্ট দিয়েছিলেন, তাঁর সেই ঋণ শোধ করার আগেই আবারও এই করোনার সময় তিনি আমাকে ঋণী করে দিলেন আরও একবার।

যেখানে সারা পৃথিবীতে করোনায় ভীত মানুষজন করোনায় আক্রান্ত আপনজনকে রাস্তায় ফেলে রেখেছে। সেখানে আমি, আমার বড় ভাই ও ডাক্তাররা বলার পরও আমার স্বামী আমাকে আলাদা রুমে থাকতে দেননি করোনা পজিটিভ আসার পরও। তিনি আমার সঙ্গে এক রুমে থেকেছেন। আমরা একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছি। আমোদের বাসার পাঁচজন সদস্যের মধ্যে একমাত্র আমার স্বামী সুস্থ ছিলেন। এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে এখনো সুস্থ আছেন।

আমার সেবা করা, সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখা, রাতে একটু পর পর উঠে আমি একটু নড়াচড়া করলেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কেমন লাগছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে? অক্সিজেন লেবেল মাপা—সব আলহামদুলিল্লাহ তিনি যেভাবে করেছেন তাতে ওপরে আল্লাহ আর দুনিয়াতে তাঁর কাছে আমি ভীষণ রকম কৃতজ্ঞ ও ঋণী। একটুকুও আমাকে তিনি তাঁর থেকে আলাদা করেননি। অসুখটাকে ভয় পেয়ে আমাকে বা আমাদের করোনা-আক্রান্ত কাউকেই তুচ্ছ করেননি। আল্লাহ তাঁকে নেক হায়াত দান করুন। আমিন।

আমাদের সবার উচিত এই করোনাকালে আতঙ্কিত না হওয়া। আপনজনদের করোনা হলে তাকে অবহেলা না করা। সহমর্মী হওয়া। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, আন্তরিকতা ও সম্মানই পারে আমাদের সব বিপদ ও খারাপ সময়টা সুন্দর ও সফলভাবে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে।

আমি আমার এই করোনা পজিটিভের পোস্ট দিইনি। খুব কাছের কিছু আত্মীয়-বন্ধুকে জানিয়েছি। তাঁরা দোয়া করেছেন, খবর নিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন।

আমাদের পুরো এক মাস খাবার সরবরাহ করেছেন আমাদের আত্মীয়, আমার ভাইবোনের বাসা থেকে। আর একজন ফেরেশতাতুল্য দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়।

আসলে মানুষ মানুষের জন্য। যত বিপদ বা মহামারি আসুক, এভাবেই ভালোবেসে কাছে থেকে মানবতার হাতে হাত রেখে আমাদের চলা উচিত। দেখুন তো আমার স্বামী কতটা কাছে থেকেও আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ থাকলেন।

তাই আসুন ভয় নয়, অবহেলা নয়, ঘৃণা নয়, আমরা সবাই সবার খেয়াল রেখে চলি। মানবতায় বেঁচে থাকি। বাঁচিয়ে রাখি মানবতাবোধ।

প্রতিদিন সকাল হলেই ভাইবোন, বন্ধুদের মেসেজ। আমি কেমন আছি। আমার নামের পাশে সবুজ আলো জ্বলে উঠলেই তাদের মনে শান্তি। এই দোয়া আর ভালোবাসা এগুলো আমায় সাহস জুগিয়েছে। আমার জন্য আমার ভাই, বোন, বন্ধু ও কাছের মানুষেরা যেমন কেঁদেছে তেমন দোয়া করেছে। তেমনি আমার লেখার অনেক পাঠক বন্ধুরাও কেঁদেছে দোয়া করেছে।

আমি পোস্ট না দেওয়ার পরও অনেকেই বুঝতে পেরেছে আমার রিপোর্ট হয়তো পজিটিভ। কারণ আমার নিয়মিত লেখা ও পোস্ট কম যাচ্ছিল। আমার পাঠকেরা, শুভাকাঙ্ক্ষীরা, ফেসবুকের থেকে পাওয়া বোনেরা আমাকে মেসেজ করে খবর নিয়েছে আমি কেমন আছি। আমি অনেককে জিজ্ঞেস করেছি কীভাবে জানলে আমি অসুস্থ?

তাদের উত্তর, আমি বুঝতে পেরেছি।

কী অদ্ভুত সুন্দর পবিত্র আত্মার ভালোবাসা। তারা শুধু নিজে একা না, পরিবারের মা ও অন্যদের সম্পৃক্ত করে আমার জন্য দোয়া করেছে।
আমি তাদের কাছেও ঋণী। আমার সব বন্ধু, আমার ইউনির জানের দোস্তরা, পাঠক ও প্রিয়জনের কাছেও আমি ঋণী হয়ে গেলাম। আমি যতদিন বাঁচব, ইনশা আল্লাহ ভালোবাসা দিয়েই এসব ভালোবাসার ঋণ শোধ করার চেষ্টা করব। আল্লাহ আমার ও সবার সহায় হোন। আমিন। চলবে...।

আরও পড়ুন
করোনা জয়ের গল্প: ৩
ভয়াবহ কিছু সময়

*আগামীকাল পড়ুন, পর্ব-৫:আমার সব কষ্ট স্বামীকে জানাইনি