ছিনতাইকারী চক্রের হাতে সর্বস্ব খুইয়েছেন তাঁরা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার খিলগাঁও থেকে রিকশায় করে বাড্ডায় তাঁর বাসায় ফিরছিলেন। রিকশাটি যখন হাতিরঝিল থানার পলাশবাগ চৌরাস্তার কাছে আসে, তখন একটি পিকআপ রিকশার গতিরোধ করে। গাড়ি থেকে দুজন নেমে ওই নারীর গলায় চাকু ধরে সোনার চেইন ও নগদ ১ হাজার ২০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় ওই নারী চিৎকার করলে হাতিরঝিল থানার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ছিনতাইকারীদের পিকআপকে ধাওয়া করে। রাত ১১টার দিকে মোল্লা টাওয়ারের সামনে থেকে দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে হাতিরঝিল থানার পুলিশ।

অন্যদিকে, ইমরাজ উদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থী ২৩ জুলাই তেজগাঁও এলাকায় সামরিক জাদুঘরটি ঘুরে দেখেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হেঁটে হেঁটে ফার্মগেটের দিকে আসছিলেন। ইমরাজ উদ্দিন যখন তেজগাঁও থানার উল্টো দিকে ব্রেন অ্যান্ড মাইন হাসপাতালের সামনে আসেন, তখন চারজন লোক তাঁকে ঘিরে ধরে। ইমরাজের কাছে থাকা মোবাইল ফোনসহ তাঁর পরিচয়পত্র কেড়ে নেয় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের কয়েকজন সদস্য।

ভুক্তভোগী ইমরাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামরিক জাদুঘর দেখে আমি হেঁটে হেঁটে ফার্মগেটে আসছিলাম। তেজগাঁও থানার উল্টো দিকে আসার পর প্রথমে একজন আমাকে ডাক দেয়। আমি থামলে তখন আরও চারজন ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী যুবক আমাকে ঘিরে ধরে। আমাকে মারতে শুরু করে। আমার কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে গলির দিকে পালিয়ে যায়। আমি তাদের পিছু নিলে উল্টো তারা আমাকে মারতে আসে। তখন আমি ভয়ে চলে আসি।’

ইমরাজ উদ্দিনের করা মামলায় একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও থানার পুলিশ।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন খাতার তথ্য বলছে, কোরবানি ঈদের আগে গত সাত দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় অন্তত সাতটি মামলা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ঈদের আগে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের কয়েকজন সদস্যকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একাধিক দল রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টির ৫৯ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ ১৬ জন, সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ ১০ জন, গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ ৯ জন, গোয়েন্দা রমনা বিভাগ ৮ জন, গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ ৮ জন, গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ ৮ জনসহ মোট ৫৯ জন অজ্ঞান পার্টির সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, ‘অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা চেতনানাশক ওষুধ বা লিকুইড কৌশলে চা, ডাব, পানীয় বা অন্য কোনো খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে খাইয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। তারা গুল, মরিচের গুঁড়া বা মলম চোখে মাখিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। মানুষের সমাগম স্থানে তারা তৎপর থাকলেও কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে তারা তৎপর ছিল। ঈদ সামনে রেখে তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন মার্কেট, শপিং মল, পশুর হাট, বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট ও রেলস্টেশন এলাকায় আগত ব্যক্তিদের টার্গেট করে সখ্য স্থাপন করে।’

সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী
৮ মার্চ দেশে করোনা শনাক্তের পর গত চার মাসে ঢাকা মহানগর এলাকায় ছিনতাই, খুন, ডাকাতিসহ সংঘবদ্ধ অপরাধের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তবে কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

শফিকুল ইসলাম নামের একজন অটোমিশুকচালক ২৫ জুলাই রাত আড়াইটার দিকে আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে নিয়ে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন। দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে শফিকুল যখন বিমানবন্দরের কাওলা আসেন, তখন আমির হোসেন নামের যাত্রী তাঁকে খিলক্ষেতের অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের সামনে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। চালক শফিকুল সেখানে পৌঁছানোর পর আগে থেকে ওত পেতে থাকা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্য তাঁকে (চালক) বেঁধে ফেলে। শফিকুলকে মারধর করে অটোমিশুকটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় ভুক্তভোগী চালকের চিৎকারে টহল পুলিশের সদস্যরা ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করে। কুড়িল বিশ্বরোডে পৌঁছালে এক ছিনতাইকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা কিছুটা তৎপর হয়ে উঠেছে। তবে পুলিশও তৎপর রয়েছে।

রাজধানীর শাহআলী থানার নবাবেরবাগ এলাকায় ভোরে ছিনতাইকারী কবলে পড়ে ৭৫ হাজার টাকা খুইয়েছেন কবিরুল নামের এক যুবক। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সংঘবদ্ধ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

শাহআলী থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগে তাঁর এলাকায় যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের নামে খুন, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা আছে।