এখন প্রাণভরে শ্বাস নিই

>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

১৯৮৮ সালে প্রথম ঢাকায় আসি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে। ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটে (বর্তমান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হই। ছাত্রজীবন শুরুই হয় সরকারবিরোধী আন্দোলনের ভেতর দিয়ে। সেই ’৯০–এর সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে ছাত্রজীবনের সমাপ্ত। ১৯৯৯ সালে কৃষি খাতে কর্মজীবন শুরু।

গ্রাম থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশটা ভালোই লাগত, ঢাকা শহরে গ্রামের আবহাওয়া। ঢাকা শহরে তখন তিন চাকার যান বেবি ট্যাক্সির আধিপত্য এবং বাসগুলোর কালো ধোঁয়া, রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়াটাও দূষিত। চারদিকে ঠিকমতো শ্বাস নেওয়া ছিল কষ্টকর।

আমি বর্তমানে মিরপুর-১২–তে থাকি। খামারবাড়িতে আমার অফিস। চাকরির পাশাপাশি প্রফেশনাল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাসা থেকে মিরপুর-১০ হয়ে খামারবাড়ি ও কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ আমার চলাচলের পথ। কিন্তু মেট্রোরেল উন্নয়নের কারণে এখন ষাট ফিট হয়ে চলাচল করি। অফিসে আসা–যাওয়ার পথে প্রকৃতিকে দেখি এবং ভাবি, করোনা যেন নতুন রূপ দিয়েছে। একসময় বসবাসের প্রায় অযোগ্য হয়েছিল এই ঢাকা শহর ধুলাবালু, দূষিত আবহাওয়া, যানবাহনের ঝনঝনানি যেন থাকত সর্বদা। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রম ছিল যেখানে–সেখানে ধূমপান, ফুটপাত দখল, রাত-বিরাতে ক্লাব পার্টি চৌব্বিশ ঘণ্টা যেন ঢাকা থাকত সরব। এখন তা নীরব, কমল, সুন্দর ও প্রশান্তির। করোনা মানুষের আত্মশুদ্ধির যেমন সুযোগ করে দিয়েছে, তেমনি প্রকৃতিকে জাগিয়েছে, সাজিয়েছে নবরূপে।

পৃথিবীর সবকিছু চক্রাকারে আবির্ভূত হয়। মানুষ দ্বারা নষ্ট প্রকৃতি যেন আবার সেই পেছনে ফিরে এসেছে, প্রতিশোধ নিচ্ছে মানুষের অপকর্মকে। গ্রাম-শহর, নদী-নালা, সমুদ্র, পাহাড়-পর্বত—সর্বত্র যেন পবিত্রতার হাতছানি। মানুষের ঘরে ঘরে যেন শান্তির দূত বইছে। পারিবারিক বন্ধন, সংযম, পবিত্রতা, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য এখন সর্বদা বিরাজমান। যে আমি আগে অনিয়মের জালে আবদ্ধ ছিলাম, সেই আমি এখন নিয়মের সঙ্গে বসবাস করছি। পরিশুদ্ধতা এসেছে আমার মনে, শরীরে এবং অনুভূতিতে। ভালোবাসতে শিখেছি মানুষকে ও প্রকৃতিকে।

সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এ সুযোগের যাঁরা সদ্ব্যবহার করতে পারেননি, তাঁরা হতভাগা। যাঁরা এখনো বৈষয়িক সুখের সন্ধানে, ক্ষমতার বিভোরে, অর্থের পেছনে ছুটে চলেছেন, অন্যায়কে আলিঙ্গন করছেন, তাঁদের এখনো সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। আসুন সবাই মিলে সুন্দর পৃথিবী গড়ি, প্রাণভরে শ্বাস নিই এবং করোনায় নিজেকে পরিবর্তন করি।

লেখক: উপপরিচালক (স. দ.), তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও সাধারণ সম্পাদক, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন।