মেয়রের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক। সিলেট জেলা প্রেসক্লাব, ৫ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক। সিলেট জেলা প্রেসক্লাব, ৫ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

কোরবানির পশুর চামড়া জব্দ করা নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘মানসিক নির্যাতন’ করার অভিযোগ করেছেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক। বুধবার বিকেলে সিলেটের দুটি প্রেসক্লাবে পৃথক দুই সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, ঈদের পরদিন নগরীর আম্বরখানা এলাকায় ৬৩০টি চামড়া স্তূপ করে ফেলে রাখায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সিটি মেয়র পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিয়ে সেখানে যান। চামড়াগুলো যত্রতত্র ফেলে রাখায় তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ করে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য শোধনাগারে নিয়ে ফেলা হয়।

মিরপুরের ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, মেয়র এই ঘটনার মাধ্যমে তাঁকে সামাজিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন। এ ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে মেয়র আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলায় তিনি সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বর্ণনা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঈদের দিন কোরবানির পশুর চামড়া সাধারণত মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কয়েকজন ডিলার চামড়া ক্রয় করার আশ্বাস দেন। কিন্তু দুপুরে ডিলাররা জানিয়ে দেন, তাঁরা চামড়া ক্রয় করবেন না। ওই অবস্থায় চামড়া বিক্রেতারা বিপাকে পড়েন। ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু কোনো ডিলারই চামড়া ক্রয়ে আগ্রহ না দেখানোয় চারটি ট্রাকে করে ৬৩০টি চামড়া সিলেটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। রাত ১২টা পর্যন্ত চামড়াবোঝাই ট্রাক সিলেট নগরীর প্রতিটি ডিলারের দোকানে গেলেও কেউ চামড়া ক্রয় করেননি। এই অবস্থায় চামড়াগুলো আম্বরখানায় আবাসন অ্যাসোসিয়েট প্রাইভেট লিমিটেডের জায়গায় রাখা হয়। এই আবাসন কোম্পানির আামি চেয়ারম্যান। রাতেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় চামড়াগুলো প্রক্রিয়াজাত করার। এ জন্য লবণ সংগ্রহ করে শ্রমিকও নিযুক্ত করি। পরদিন দুপুরের দিকে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার কাজ শুরুর আগেই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সেখানে গিয়ে সব চামড়া জব্দ করেন।’

চামড়া জব্দ করার সময় মেয়র আবাসন কোম্পানির ফটক ভেঙে ফেলেছেন বলে অভিযোগ করে ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক বলেন, মেয়র গণমাধ্যমকে বলেছেন, জগন্নাথপুর থেকে হাজার হাজার চামড়া সিলেটে এনে ডাম্পিং করছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান। মেয়রের এই বক্তব্য অসত্য। ঈদ উপলক্ষে কোরবানি দেওয়া পশুর চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সরকারের এই নির্দেশনা তিনি বাস্তবায়ন করেছেন। এ ঘটনায় মানসিক ও সামাজিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথপুর মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাসুদুর রহমান, বডিং সুপার মাওলানা হুসাইন আহমদ, জামেয়া ইসলামিয়া লহড়ি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মিজানুর রহমান, মিরপুর ইউপি সদস্য মো. আবদুস শহীদ উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্ভট কাণ্ড করে তিনি (চেয়ারম্যান) নিজেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ঘটনার তিন দিন পর এখন এই দায় আমার ওপর চাপানো হাস্যকর।’ মেয়র বলেন, ঈদের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে সিটি করপোরেশন থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হবে। সিটি করপোরেশনের ১ হাজার ২০০ কর্মী নগরীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বর্জ্যমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান নিজের জায়গার পচে যাওয়া পশুর চামড়া রেখে গোটা আম্বরখানা এলাকাকে দুর্গন্ধময় অবস্থার মুখে ফেলে দিয়েছিলেন।