ভয়ে ঘর থেকে বের হন না সেই কাউন্সিলর

সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে মিরপুরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পী এখন বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। ১২ বছর আগে তাইজুলের বাবাকেও হত্যা করা হয়েছিল। তাইজুলের দাবি, পল্লবীর সন্ত্রাসী জামিল এর আগে তাঁর বাবাকে খুন করেছিলেন। এখন জামিল ও তাঁর ভাই মামুন জোট বেঁধে ভাড়া করিয়ে এখন তাঁকে খুন করতে চাইছেন।

তাইজুল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। পুলিশ বলছে, তাইজুলকে হত্যাচেষ্টাকারীদের মধ্যে তিনজনকে গত ২৯ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। যাঁদের কাছ থেকে ওজন মাপার যন্ত্রের মতো দেখতে বোমা, দুটি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়। পল্লবী থানায় ওই বোমার বিস্ফোরণে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন। 

এরপর থানায় বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিবৃতি দিলে ওই ঘটনা আন্তর্জাতিকতা পায়।

বোমা, গুলিসহ গ্রেপ্তার শহীদুল ইসলাম (২৩), রফিকুল ইসলাম (৪০) ও মোশাররফ হোসেনকে (২৬) সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। 

আতঙ্কের দিন-রাত

গত বুধবার কথা হয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হুমকি পাওয়ার পর কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আর যাই না। এখন বাসায় বসে সব কাজ করছি।’

তাইজুল বলেন, তাঁর বাবা পোশাক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে (মন্টু) ২০০৮ সালে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন।
ওই বছরই প্রতিদ্বন্দ্বীরা জামিল গ্রুপকে ভাড়া করে তাঁর বাবাকে মিরপুর ১১ নম্বরের নান্নু মার্কেটের সামনে গুলি করে হত্যা করে। জামিল ওই হত্যা মামলার আসামি। কিন্তু ১২ বছরেও ওই মামলার বিচার শেষ হয়নি।

ঘটনাপ্রবাহ জানিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে লোকমুখে তিনি জানতে পারেন তাঁকে হত্যার চেষ্টা চলছে। চাঁদপুরের মতলব থেকে একজন ফোন করেও তাঁকে বিষয়টি জানান। পরে তিনি ঘটনাটি পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলামকে জানান। দুই দিন পর তিনি স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর বাসায় গিয়ে সহযোগিতা চান। সাংসদের কথামতো তিনি মিরপুর বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন। 

>পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণ
গ্রেপ্তার তিনজন মিরপুরের সন্ত্রাসী জামিল-মামুন গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ
তবে বোমার উৎস এখনো জানা যায়নি

তাইজুল জানান, হত্যার হুমকি পাওয়ার আগে থেকে স্থানীয় যুবক বাবু একটি মোটরসাইকেলে তাঁর গাড়িকে অনুসরণ করছিলেন। পরে তাঁকে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ডেকে আনা হলে বাবু বলেন, মামুনকে চাঁদা না দিলে তাইজুল খুন হতে পারেন। তখন মামুনকে ১ লাখ চাঁদা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চাঁদা পেয়েও কেন ওই সন্ত্রাসী দলটি তাঁকে মারতে চাইছে, তা বুঝতে পারছেন না তিনি।

 বোমার উৎস অজানা

মামলা তদন্ত তদারক কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপকমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, রিমান্ডে থাকা তিনজনই পল্লবীর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী জামিল ও মামুন গ্রুপের সদস্য। তাঁরা স্থানীয় একটি সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ওজন মাপার যন্ত্রে বসানো বোমা সংগ্রহ করেছিলেন। বোমার তৈরির কারিগর চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। তাদের এবং পলাতক এজাহারভুক্ত দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আগে তুলে নেওয়ার অভিযোগ 

গতকাল পল্লবীতে গেলে শহীদুল ও রফিকুলের স্বজনেরা অভিযোগ করেন, গত ২৭ জুলাই বিকেলে দুজনকে তুলে নেওয়া হয়। শহীদুলের ভাই রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর তাঁরা পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন। আর রফিকুলের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, তাঁর স্বামী ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে ইট–বালুর ঠিকাদারি করে সংসার চালাচ্ছিলেন। রফিকুলকে তুলে নেওয়ার পর থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ জিডি না নিয়ে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।