এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার স্বপ্ন সড়কে শেষ

রেশমা নাহার। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
রেশমা নাহার। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

ফেসবুকে নিজের নামের সঙ্গে বন্ধনীচিহ্নে পর্বতারোহী জুড়ে দিয়েছেন। গান, আবৃত্তি, বইপড়া, সাইকেল চালানো তাঁর ভীষণ পছন্দ। তবে সব ছাপিয়ে রেশমা নাহারের স্বপ্ন—নিজেকে পর্বতারোহী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। একদিন এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা। কিন্তু গাড়িচাপায় সব শেষ। রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আজ শুক্রবার সকালে গাড়িচাপায় প্রাণ হারান তিনি।

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে ঘটনাটি ঘটে। রেশমা সংসদ ভবন এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যানের লেক রোড ধরে গণভবনমুখী সড়কে দিয়ে এগোচ্ছিলেন। চন্দ্রিমায় ঢোকার ব্রিজের সামনের সড়কে একটি মাইক্রোবাস তাঁকে চাপা দেয়। এতে তাঁর মাথায় আঘাত লাগে। পথচারীরা উদ্ধার করে তাঁকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

শেরে বাংলা নগর থানায় রাখা হয়েছে পর্বতারোহী রেশমা রত্নার বাইসাইকেলটি। ঢাকা, ৭ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার
শেরে বাংলা নগর থানায় রাখা হয়েছে পর্বতারোহী রেশমা রত্নার বাইসাইকেলটি। ঢাকা, ৭ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার

যে মাইক্রোবাসটি রেশমাকে চাপা দিয়েছে, তার হদিস এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে জানান ওসি আবুল কালাম আজাদ। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেটা দেখে গাড়ি শনাক্ত করা হবে।’

রেশমা রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার আইয়ুব আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তাঁর বাড়ি নড়াইলে। তিনি ঢাকায় মিরপুর এলাকায় থাকতেন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেশমা নাহারকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢাকা, ৭ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেশমা নাহারকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢাকা, ৭ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার

রেশমার দুলাভাই মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রেশমা আগে তাঁর বড় বোনের সঙ্গে পুরান ঢাকায় থাকতেন। পরে কর্মস্থল পরিবর্তন হলে তিনি মিরপুরে চলে যান। বেলা ১১টার দিকে খবর পেয়ে তাঁরা হাসপাতালে যান।

মনিরুজামান বলেন, মাইক্রোবাসটি কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তাঁরা মামলা করবেন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেশমা নাহারের শোকার্ত স্বজনসহ অন্যরা। ঢাকা, ৭ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেশমা নাহারের শোকার্ত স্বজনসহ অন্যরা। ঢাকা, ৭ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রের একজন নিয়মিত সদস্য ছিলেন রেশমা। সেই সূত্রে রেশমার বন্ধু সাখাওয়াত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেশমা খুবই উদ্যমী ছিলেন। গান, আবৃত্তি, পাঠচক্রে নিয়মিত অংশ নিতেন। সাইকেল চালাতে ভালোবাসতেন। তিনি সকালে সাইকেল চালিয়ে রমনায় গিয়ে শরীরচর্চা করে হাতিরঝিল যেতেন। সেখানে কয়েক চক্কর দিয়ে সাইকেলে চালিয়ে বাসায় ফিরতেন।’

সাখাওয়াত হোসেন জানান, রেশমার স্বপ্ন ছিল নিজেকে পর্বতারোহী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। তিনি এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার স্বপ্ন দেখছিলেন। সে জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেশমা নাহারের শোকার্ত স্বজনসহ অন্যরা। ঢাকা, ৭ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেশমা নাহারের শোকার্ত স্বজনসহ অন্যরা। ঢাকা, ৭ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার

বাংলাদেশের কেওকারাডংয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে রেশমা নিজের পর্বত অভিযান শুরু করেন। তিনি ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিংয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। রেশমা গত বছর লাদাখের স্তোক কাংরি পর্বত জয় করেন। এ ছাড়া আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো ও মাউন্ট কেনিয়া জয়ের জন্য গিয়েছিলেন তিনি।