ধনু নদের পানি ১৬ দিন ধরে বিপৎসীমার ওপরে

নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় বন্যার পানি ধীরগতিতে কমছে। এখনো প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। ১৬ দিন ধরে ধনু নদের পানি বিপৎসীমার ওপরেই রয়েছে। 

আজ শুক্রবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ধনু নদের পানি খালিয়াজুরি বাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, ধনু নদের পানি খুব ধীরগতিতে কমছে। যেটুকু পানি কমছে, তাতে বন্যা পরিস্থিতি আগের মতোই রয়েছে। এখনো খালিয়াজুরি বাজার পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ওই নদের খালিয়াজুরি বাজার পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫ দশমিক ৬১ মিটার। বর্তমানে পানির স্তর ৬ দশমিক ০৯ মিটার। তবে জেলার অন্যান্য নদ-নদীর সবগুলো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গত ২১ জুলাই থেকে জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ৮টিতেই তৃতীয়বারের মতো নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়। এর মধ্যে বেশি বন্যা হয় কলমাকান্দা ও খালিয়াজুরি উপজেলায়। ওই দুটি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নেই বন্যা হয়। বন্যার পানিতে বীজতলা, পুকুর, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস পানিতে তলিয়ে যায়।
অন্যান্য উপজেলায় রাস্তাঘাট চলাচলের উপযোগী হলেও খালিয়াজুরিতে এখনো তা পানির নিচে। অবশ্য খালিয়াজুরি হাওরাঞ্চল হওয়ায় বছরে প্রায় ৬ মাস ৯০ শতাংশের বেশির রাস্তাঘাট পানির নিচে থাকে। বাকি ১০ শতাংশের মধ্যে এবারের বন্যায় ৮ শতাংশ এখনো পানির নিচে। খালিয়াজুরির ধনু নদের পানি আজ দুপুর পর্যন্ত বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত ২১ জুলাই খালিয়াজুরি পয়েন্টে ধনু নদের পানি বিপৎসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে বন্যার কারণে খালিয়াজুরি কলেজ, সিদ্দিকুর রহমান বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নগর মেন্দিপুর, পাঁচহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রায় দুই হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। আশ্রয় নেওয়া লোকজন ও বানভাসি মানুষের মধ্যে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।

খালিয়াজুরি কলেজে আশ্রয় নেওয়া বল্লভপুর গ্রামের গৃহিণী লক্ষ্মী রানী দাস জানান, স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে ১৮ দিন ধরে এই কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রথম দিকে প্রশাসনের উদ্যোগে একবার ১০ কেজি চাল ত্রাণ হিসেবে পেয়েছিলেন। এরপর আর কিছু পাননি। অর্থসংকটের মধ্যেও নিজেদেরই খাবারের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। তাঁর মতো অনেকেই সেখানে খাবারের সংকটে ভুগছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই শতাধিক মানুষ রয়েছে। খালিয়াজুরিতে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির এখনো তেমন উন্নতি হয়নি।