কুয়েতে পাপুলের ৬৭ কোটি টাকার দরপত্র বাতিল

কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল
কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল

মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক বাংলাদেশের সাংসদ মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের (পাপুল ) প্রতিষ্ঠানের নতুন একটি দরপত্র কুয়েত সরকার বাতিল করে দিয়েছে। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মারাফিয়া কুয়েতিয়া গ্রুপ নামের প্রতিষ্ঠানটি ২৫ লাখ দিনার বা প্রায় ৬৭ কোটি টাকার কাজটি পেয়েছিল। কুয়েতের সবচেয়ে ছোট প্রদেশ হাউলরির বিভিন্ন ভবন ও মসজিদের তিন বছরের পরিচ্ছন্নতা সেবার কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। ওই কাজগুলো কুয়েতের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ার কথা ছিল।

নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে এ পর্যন্ত শহিদ ইসলামের প্রতিষ্ঠান মারাফিয়া কুয়েতিয়ার তিনটি সরকারি কাজের দরপত্র বাতিল হলো। এর আগে জুনে কুয়েতের বিমানবন্দর এবং মসজিদ কমপ্লেক্স রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজ বাতিল হয়ে যায়। ওই কাজ দুটি কয়েক মাস আগে নবায়ন করা হয়েছিল।

কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস ও ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমসের গত কয়েক দিনের খবরে বলা হয়েছে, কুয়েতের সরকারি দরপত্র বিষয়ক কর্তৃপক্ষ তাদের সবশেষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ঈদুল আজহার ছুটির ঠিক আগে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রায় দুই মাস ধরে মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক থাকায় কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষ মোহাম্মদ শহীদ ইসলামের (পাপুল) মালিকানাধীন কুয়েতিয়া মারাফিয়াকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি কোনো কাজ দিতে নিষেধ করেছে জনশক্তি কর্তৃপক্ষ।

শহিদ ইসলামের আটকাদেশের মেয়াদ আগামীকাল রোববার শেষ হচ্ছে। আজ সুপ্রিম কোর্টে আটকাদেশ পুনর্বিবেচনা–বিষয়ক বিচারের চেম্বারে শহিদ ইসলামের পাশাপাশি কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল শেখ মাজন আল-জারাহ এবং অন্য দুই কুয়েতি নাগরিক হাসান আবদুল্লাহ আল খাদের এবং নওয়াফ আলী আল শালাহিকেও হাজির করার কথা রয়েছে। এঁদের সবার বিরুদ্ধে শহিদ ইসলামের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তাঁকে অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ২৭ জুলাই আদালত শহিদ ইসলামসহ চারজনকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত কারাগারে রাখার নির্দেশ দেন। গত ৬ জুন আটকের পর থেকে মোট তিন দফায় বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ওই সাংসদের আটকাদেশ বাড়ানো হয়েছে।

কুয়েতে প্রবাসী কর্মী কয়েকজন শ্রমিক আজ শনিবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, শহিদ ইসলামের ভিসা ব্যবসায় অন্যতম সহযোগী মো. আমান শিকদার নামের এক বাংলাদেশিকে কুয়েতের সিআইডি গত বুধবার আটক করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মারাফিয়া কুয়েতিয়ার অন্য এক কর্মী এই প্রতিবেদককে জানান, শহিদ ইসলামের মামলায় ঝামেলা এড়াতে সম্প্রতি নূর আলম ও ইমরান নামের দুই সহযোগীকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মকর্তারা। নূর আলম শহিদ ইসলামের গাড়ি চালাতেন এবং একটি প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়কও ছিলেন।

মানব ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগে কুয়েতের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) কর্মকর্তারা জুনের ৬ তারিখ শহিদ ইসলামকে তাঁর বাসা থেকে আটক করে। এরপর গোয়েন্দাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে শহিদ ইসলাম কুয়েতের রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী লোকজনকে ঘুষ দিয়ে অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের পাশাপাশি ভিসা ব্যবসা ও ঘুষ দিয়ে কাজ পাওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ওই সব অভিযোগের বিষয়ে আদালতে এখনো পূর্ণাঙ্গ শুনানি শুরু হয়নি।