কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে আজ রোববার যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। ছবিটি কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে আজ রোববার যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। ছবিটি কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে আজ রোববার সকাল থেকে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে এই নৌপথের চ্যানেল মূলে নাব্যতা–সংকট ও মাঝপদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ার পরও প্রতিটি ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে রয়েছে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ফেরিঘাট সূত্র জানায়, ঈদের ছুটি শেষ হলে গত মঙ্গলবার থেকে ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার যাত্রী ও যানবাহনের উপচে পড়া ভিড় ছিল কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায়। অনেক যাত্রী ও যানবাহন গতকাল সন্ধ্যার আগে পদ্মা পার হতে না পেরে নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যান। ফিরে যাওয়া এসব যাত্রী ও যানবাহনগুলো আজ রোববার সকাল থেকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে ভিড় করে। ফলে সকাল আটটা থেকেই এই নৌপথে চলাচলরত ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। বর্তমানে এই নৌপথে চলাচলরত ১৫টি ফেরি সচল থাকলেও পদ্মায় তীব্র স্রোত ও নাব্যতা–সংকটের কারণে চলছে ৭টি ফেরি। চলাচলরত ফেরিগুলো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ সময় নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। ফলে ঘাটে যানবাহনের সংখ্যা কমছে না। এতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা দূরপাল্লার বাসে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের টার্মিনালে নেমেই ফেরিতে আগে ওঠার প্রতিযোগিতায় নামছেন। প্রতিটি ফেরিতে যানবাহনের তুলনায় যাত্রী ও মোটরসাইকেলের চাপ অনেক বেশি। ফেরিতে জায়গা না পেয়ে যাত্রীদের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটে। ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলোয় ওঠা যাত্রীরা কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে পদ্মা পারাপার করছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, দিনের পর দিন ঘাটের টার্মিনালে বসে থেকে অলস সময় পার করছেন পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরা। ঘাটের তিনটি টার্মিনালে পণ্যবাহী অন্তত ২০০ ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।

খুলনা থেকে ছয় দিন আগে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘ফেরি কম। কোনো কোনো ফেরিতে আমাদের একটা–দুইটা গাড়ি তোলে, আবার তোলে না। প্রতিটি ফেরিতে আমাদের ৫টি করে গাড়ি তুললে এভাবে বসে থেকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।’

ঘাটের চার নম্বর টার্মিনালে আটকা পড়া পণ্যবাহী ট্রাকের চালক সুজন খালাসি বলেন, ‘টার্মিনালে বসে দিন কাটানো অসহায় ট্রাকচালক আমরা। আমাদের কথা ঘাটের কেউ চিন্তাও করে না। আগে এমন ছিল না। সিরিয়াল ধরে কমবেশি ট্রাক ফেরিতে তুলত। এখন ফেরি পারপারে আমাদের অনেক দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে।’

ঢাকাগামী যাত্রী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল বিকেলে এসে কোনো ফেরি পাইনি। তাই মোটরসাইকেল নিয়ে বরিশালে ফিরে গেছি। আজ খুব সকালে ঘাটে আসছি। কিন্তু ঘাটে ভিড় থাকায় ১০টার আগে ফেরিতে উঠতে পারিনি।’

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুল আলিম বলেন, ‘তিন দিন ধরেই ঘাটে যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ির খুব চাপ। তাই টার্মিনালে কিছু ট্রাক আটকা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে পার করার। কিন্তু ফেরি ঠিকমতো আমরা চালাতে পারছি না। এক দিকে তীব্র স্রোত, অন্য দিকে বিকল্প চ্যানেলে নাব্যতা–সংকট। সবকিছু মিলিয়ে ফেরি চালাতে আমাদের নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রী আর মোটরসাইকেলের প্রচুর ভিড়। আমরা পুলিশ সদস্যরা যাত্রী ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি।’