অর্পিত সম্পত্তি রক্ষায় 'সরকারি সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা' বাতিল দাবি

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের আওতায় ‘প্রাপ্ত সরকারি সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২০’ প্রণয়নের উদ্যোগ বন্ধের উদ্যোগ বাতিলের দাবি উঠেছে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেল এ দাবি করেছে। এ দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীকেও দেওয়া হয়েছে বলে সেলের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

স্মারকলিপিতে এ ধরনের একটি বিতর্কিত বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ নেস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং এ ধরনের উদ্যোগ বন্ধের দাবি জানানো হয়। গতকাল রোববার এ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ করোনাকালীন এই মহামারির অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে গত ১১ জুলাই ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের আওতায় প্রাপ্ত সরকারি সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২০’–এর ওপর মতামত প্রদানের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই খসড়া প্রকাশ করেছে। আমরা এই ধরনের একটি বিধিমালার খসড়া দেখে শুধু বিস্মিত নই, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। এ ধরনের বিধিমালা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও তার পরিপন্থী। আমাদের জানামতে, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল থেকে মাত্র ৩০ হতে ৩৫ শতাংশ আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে এবং এই নিষ্পত্তিকৃত ৩৫ শতাংশের কমবেশি ৫৫ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকেও নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে যেসব সম্পত্তি প্রকৃত মালিক বা উত্তরাধিকারীদের প্রত্যর্পণের আদেশ দেওয়া হয়েছে, তার ৫ শতাংশও বারবার অনুরোধ ও আবেদন সত্ত্বেও বিভিন্ন অজুহাতে প্রকৃত মালিক বা উত্তরাধিকারীদের প্রত্যর্পণ করা হয়নি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের সব কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই এ ধরনের বিধিমালা করা যেতে পারে এবং তা প্রণয়নের সময় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তা করতে হবে। তার আগে প্রস্তাবিত এই বিধিমালা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভুক্তভোগীদের সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার সদিচ্ছাকে পুনরায় আটকে দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হবে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়।’

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘২০১৮ সালের প্রথম দিকে এই বিধিমালাটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তখন সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে কেন এখনই এই বিধিমালা করা উচিত নয়, তার সপক্ষে আমাদের যুক্তি তুলে ধরেছিলাম। তখন মন্ত্রণালয় এ ধরনের বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ থেকে সরে এসেছিল। তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, এ ধরনের বিধিমালা প্রণয়নের পরিকল্পনা তাদের নেই। কিন্তু পুনরায় একই ধরনের উদ্যোগ আমাদের সত্যিই ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে।’

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের ক্ষুদ্র অসাধু চক্র এই শত্রু সম্পত্তি তথা অর্পিত সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে এই দেশের সর্বাধিকসংখ্যক সংখ্যালঘু পরিবারকে ৫৫ বছর ধরে নানাভাবে হয়রানি ও নিঃস্ব করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারসহ আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এই চক্র নানা অসাধু তৎপরতায় লিপ্ত থেকেছে। এখন তাদের উত্তরসূরিরা এই কাজ বিরামহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিকে এদের বিরুদ্ধে এখনই সতর্ক হতে হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ কর হয়।

স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন মানবাধিকারকর্মী, ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নারীনেত্রী ও নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারাকাত, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সহসভাপতি তরারক হোসাইন, অর্পিত সম্পত্তি প্রতিরোধ আন্দোলনের সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ এবং এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।